‘প্রতিবাদ জানাতে গিয়েও হামলার শিকার, মতপ্রকাশে স্বাধীনতা কই?’

হামলার প্রতিবাদ জানাতে গিয়েও হামলার শিকার হতে হচ্ছে, তাহলে মতপ্রকাশে স্বাধীনতা কই? এমন প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মো: মুজিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পর যেসব শিক্ষার্থী প্রতিবাদ জানতে নেমেছিলো তাদের ওপরও হামলা করা হয়েছে। আবার শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছনা করা হয়েছে। হামলার প্রতিবাদ জানতে গিয়েও হামলার শিকার হতে হচ্ছে। মতপ্রকাশে স্বাধীনতা কই? তাহলে বলতে হয়, মতপ্রকাশে স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ করার কোন পরিপূর্ণ পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি না। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ক্যাম্পায় চায়। তাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে আমি সহমত পোষণ করছি।’

১৬ জুলাই, সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে ঢাবি শিক্ষক মো: মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন। নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের ডাকা এই সামাবেশ সংহতি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ হওয়ার দরকার আছে। কিন্তু সেটা শান্তিপূর্ণভাবে, সহিংসতার মধ্য দিয়ে নয়। তাই আগামীতেও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে হবে।’

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হবে উন্মুক্ত, নিরাপদ। এখানে সকলে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু বর্তমানে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে গেলে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর স্বায়ত্বশাসন এখন আর নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে।’

ক্যাম্পাসে ভিন্ন মত প্রকাশের সুযোগ এবং ভিন্ন মত পোষণের কারণে হল থেকে বের করে দেওয়ার সংস্কৃতি দূর না হওয়া পর্যন্ত নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা লড়াই করে যাবে জানিয়ে শিক্ষার্থী মেঘমল্লার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হুমকি দিচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। হামলা ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চাই। কোটা আন্দোলনের যেসব শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে, তাদের মুক্তি চাই।’

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী লিনা ও আসাদের ওপর হামলার ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দ্বিতীয় বাড়ির মতো। এখানে আমাদের স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার রয়েছে। কিন্তু গত শনিবার ক্যাম্পাসে হাঁটার সময় অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। প্রক্টরকে জানানো হলে তিনি বিচার না করে ‘রাতে কেন বের হয়েছে’ এই প্রশ্ন করেন। তার এ ধরণের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই এবং এ জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’

বিক্ষোভ মিছিল পূববর্তী সমাবেশে নিরাপদ ক্যাম্পাসে দাবি জানিয়ে ইশিতা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) ছাত্রলীগের গুণ্ডারা কয়েকজন ছাত্রীর নাম উল্লেখ করে গালিগালাজ করেছিল। ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের কাছ থেকে আমরা মার খেয়েই যাচ্ছি। মানববন্ধনে আমার একটাই প্রশ্ন, আর কতদিন এভাবে মার খেয়ে যাব? ভিসি-প্রক্টর কেন এদের বিচার করেন না?’

নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও ডাকসু ভবন হয়ে প্রক্টর অফিসের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে স্লোগানে স্লোগানে তারা উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বেলা ১২টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে ক্যাম্পাসে হামলাকারীদের বিচার চেয়ে একটি মিছিল বের করা হবে এবং উপাচার্য কার্যালয়ে যেয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা।