সদরঘাট-বিমানবন্দর চলবে ওয়াটারবাস

কর্ণফুুলীর নদীর তীরে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহরের এক সময়ের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল নৌপথ। পণ্যপরিবহণে বেশি ব্যবহৃত হলেও সড়ক ব্যবস্থা উন্নতির সাথে সাথে কমে আসে যাত্রী পরিবহণ। তবে শহর সম্প্রসারণের সঙ্গে বন্দরনগরীতে বেড়েছে মানুষের চাপ। সেই সঙ্গে নিত্য যানজট তো লেগেই আছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়ক পথে পতেঙ্গায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেতে যানজটের কারণে যাত্রীদের বেশ বেগ পেতে হয়। তাই এবার বিমানযাত্রীসহ নগরবাসীকে সদরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাতায়াতে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালুর করতে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মাস দু’য়েকের মধ্যে ওয়াটার বাস চলাচলের কার্যক্রম শুরু হবে। অনেকদিন ধরেই এই রুটে ওয়াটার বাস চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন মহানগরীর সচেতন নাগরিকেরা। তবে এই নৌ সার্ভিসটি চালু হলে এটি হবে চট্টগ্রামের ইতিহাসে প্রথম।

বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ জানান, যানজটের দুর্ভোগ লাঘবে বহুভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বন্দর চালু রাখার স্বার্থে রাস্তায় গাড়ির চাপও কমানো যাচ্ছে না। বে টার্মিনাল চালু না হওয়া পর্যন্ত রাস্তাটিক পুরোপুরি উন্মুক্ত করা অসম্ভব। এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এজন্য অবকাঠামোগত সব সুযোগ সুবিধা করে দিবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণেই কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা ড্রাইডককে কাজটি দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ওয়েস্টার্ন মেরিনের সাথে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী মাস দু’য়েকের মধ্যে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ওয়াটার বাস সার্ভিস পুরোদমে চালু করা হবে। সদরঘাটে একটি টার্মিনাল এবং পতেঙ্গায় পল্টুন স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। শুরুতে একটি বা দুইটি ভ্যাসেল দিয়ে সার্ভিস চালু করা হবে। চাহিদার সাথে সার্ভিস বাড়ানোর ব্যবস্থা থাকবে। ফ্লাইটের সময়সূচির সাথে সমন্বয় করে এই ওয়াটার বাস সার্ভিস চলবে।

জুলফিকার আজিজ বলেন, সদরঘাট থেকে যাত্রীরা লাগেজসহ ওয়াটার বাসে চড়বেন। পতেঙ্গায় এয়ারপোর্টের কাছে নদীতে পল্টুন স্থাপন করা হবে। ওখানেই বিমান যাত্রীদের চেকইন করা হবে। যাত্রীদের লাগেজ সংশ্লিষ্ট ফ্লাইট কোম্পানির ভ্যানে চলে যাবে। যাত্রীদের মিনিবাসের মাধ্যমে বিমানবন্দরে নেয়ার ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইট অপারেটররা। এতে করে যাত্রীদেরকে ঘাট থেকে লাগেজ নিয়ে টানাটানি করতে হবে না।

ওয়েস্টার্ণ মেরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একেবারেই নতুন একটি ধারণা নিয়ে কাজটি শুরু করা হচ্ছে। সর্বসাকুল্যে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে যাত্রীদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। দ্রুতগতি সম্পন্ন চারটি ওয়াটার বাস নির্মাণ করা হচ্ছে। ত্রিশ জন ধারণক্ষমতার এই চারটি বাস দিয়ে সার্ভিসটি শুরু হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বন্দরকেন্দ্রিক যানজটের সুরাহা করতে অনেক চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হচ্ছে না। নগরীর বারিক বিল্ডিং থেকে ইপিজেড এবং সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট থাকে। এতে মানুষের ভোগান্তি চরমে আকার ধারণ করে। আর পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ হালিশহর পর্যন্ত থাকা কয়েক লাখ মানুষকে এই যানজট মোকাবেলা করেই প্রতিদিনের কাজ করতে হয়। অন্যদিকে প্রতিদিন বিমানবন্দরের কয়েক হাজার যাত্রী এই পথে যাতায়াত করেন। 

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সারোয়ার ই আজম জানান, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আগের তুলনায় এখন বেশি যাত্রী এবং ফ্লাইট ওঠানামা করছে।প্রতিদিন সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে এগারটা পর্যন্ত ১৩/১৪টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ১৩/১৪টি ডোমেস্টিক ফ্লাইট অপারেট করে বিমানবন্দর। গড়ে ২৮টি ফ্লাইটে সাড়ে চার হাজারের মতো যাত্রী চলাচল করে। গত বছরই ১৫ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করেছেন।