নবজাতকের নিথরদেহ নাড়া দিলো সবাইকে!

‘সবে চারদিন হলো দুনিয়াতে এসেছে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেশবাসীকে কাঁদিয়ে স্বর্গে ফিরতে হলো তাকে।’ শুক্রবার থেকে এই ক্যাপশনে একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে এক নবজাতকের নিথর দেহ রাস্তায় পড়ে আছে। আর তাকে ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়।

পরে জানা গেল, শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চারদিন বয়সী সন্তানকে একটি ক্লিনিকের পাঁচতলার ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে হত্যা করে মা সীমা আক্তার। পরে সীমা নিজেও ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

সীমা আক্তার জেলার সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের ফুলচং গ্রামের মনির মিয়ার স্ত্রী। গত বছর লেবানন প্রবাসী মনিরের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। পুলিশ ধারণা করছে, পারিবারিক কলহের জেরে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।

এদিকে শিশুটির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে সৈয়দ মো. মহসিন নামে একজন সিরিয়ার শরণার্থী শিশু আয়লান কুর্দি সঙ্গে তুলনা করে লিখিছেন, ‘এমন মৃত্যু কারো কাম্য নয়। আয়লান কুর্দির মৃত্যু দুনিয়ার বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক বেসরকারি ক্লিনিকের ছাদ থেকে পড়ে নিষ্পাপ শিশু ও মায়ের মৃত্যর ঘটনা সারা বাংলার মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়ে গেল। এমন মৃত্যু কারও কাছেই প্রত্যাশিত নয়। পরপাড়ে ভালো থেকো প্রয়াত মা ছেলে।’

পলাশ নামে একজন লিখেছেন, ‘আজ যে শিশুর থাকার কথা ছিল পরম আদরে, বাবা-মায়ের মান-অভিমান তাকে নিয়ে গেল লাশকাটা ঘরে।’ 

খন্দকার আক্তারুজ্জামান নামের একজন মা ও শিশুর শান্তি কামনা করে লিখেছেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃজনক! ইস মনটা কাঁদছে শুধু বাচ্চাটার জন্য। হে আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়াত দান করুন, আমিন।’

তবে রাকেশ মাহবুব প্রীতম নামের একজন উৎসুক জনতা দয়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে হয়তো এমনটা ঘটতো না উল্লেখ করে ফেসবুকে লেখেন, ‘এটা আমাদের বাংলাদেশ এর প্রতিচ্ছবি!! সবাই চিল্লাইলো!! গালি দিল। কিন্তু যদি ৫টা লোকও নিচে দাঁড়ায় থাকতো তবে মা বাচ্চা দুই জনকেই বাচানো যেত।’

এখানেই শেষ নয় ঘটনাটির ভিডিও অনেকেই আপলোড করে নানা মন্তব্য করছেন। এ ঘটনায় শুক্রবারই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় অপমৃত্যর এক মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়নি। তবে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ কোন গাফলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশকেও চার দিনের শিশুটির ছবি নাড়া দিয়েছে। এ নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ছবিটিতে শিশুর নিথরদেহ ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে আমরাও মর্মাহত।’

পুলিশ জানায়, প্রসব বেদনা নিয়ে সীমা গত ১৬ অক্টোবর বিকেলে শহরের জেলরোডস্থ লাইফ কেয়ার হাসপাতালের ৩০২ নম্বর বেডে ভর্তি হন। সেদিন সন্ধ্যায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন সীমা।

শুক্রবার সকালে হাসপাতাল থেকে তাদের ছাড় পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রহস্যজনক কারণে লাইফ কেয়ার হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্পেশালাইজড হাসপাতালের ছাদ থেকে সীমা প্রথমে তার নবজাতককে ছুঁড়ে ফেলে দেনে। এরপর তিনি নিজেও নিচে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।