গোতাবায়াকে আশ্রয় দিয়ে সমালোচনার মুখে মালদ্বীপ সরকার

মালদ্বীপের নাগরিকরা গতকাল বুধবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারে পুরো শ্রীলঙ্কার লোকজন যে ব্যক্তিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, সেই ব্যক্তি তাদের আতিথ্য নিয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে তারা নিজেদের সরকারের ওপরই ক্ষোভ ঝেড়েছেন।

মালেতে শ্রীলঙ্কানদের বিক্ষোভ

কয়েক দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পদত্যাগের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে পালিয়ে যান। ৭৩ বছর বয়সী গোতাবায়ার সঙ্গী ছিলেন তার স্ত্রী এবং দুই দেহরক্ষী। শ্রীলঙ্কা৷ বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে তারা মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে গিয়ে উপস্থিত হন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনী।

এদিকে গোতাবায়া মালদ্বীপ আসায় গতকাল বিকেলে শ্রীলঙ্কার প্রবাসীদের একটি দল মালেতে বিক্ষোভ করেছে। তাদের প্রতিবাদ সমাবেশে বহন করা একটি ব্যানারে লেখা ছিল, প্রিয় মালদ্বীপের বন্ধুরা! দয়া করে আপনার সরকারকে অপরাধীদের রক্ষা না করার জন্য অনুরোধ করুন। পুলিশ অবশ্য দ্রুত তাদের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নেয় এবং জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

কলম্বোতে বিক্ষোভ অব্যাহত

শ্রীলঙ্কার এসব বিক্ষোভাকারীর প্রতি ক্ষোভ ও সংহতি জানায় মালদ্বীপবাসী। তারা রাজাপাকসেকে দেশ ছেড়ে প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছে এবং শ্রীলঙ্কায় ক্রমাগত অস্থিরতার মধ্যে সেখানে বসবাসকারী আনুমানিক আট হাজার মালদ্বীপবাসীর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে।

জাতিসংঘে মালদ্বীপের বিশেষ দূত এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ শহীদ টুইট করে বলেছেন, গোতাবায়া রাজাপাকসেকে আশ্রয় দেওয়া এবং তাকে যুদ্ধাপরাধ ও দুর্নীতির জবাবদিহিতা এড়াতে সহায়তা করা শ্রীলঙ্কার জনগণ ও কর্মীদের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা, যারা মালদ্বীপে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়েছিল।

মালদ্বীপের প্রধান সংবাদপত্রের সম্পাদক ইসমাইল নাসির একটি উপ-সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন করেন, কেন মালদ্বীপবাসীরা একটি জাতিকে ধ্বংস করার পর ধ্বংসকারীর পালিয়ে যাওয়ার পথে মধ্যস্থতাকারী হবে? মালদ্বীপ সরকারকে কেন এমন নীচ অবস্থায় পড়তে হবে? কেন একজন ব্যক্তি মালদ্বীপের রাষ্ট্রের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন, যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার্ত ও হতাশ? উত্তর দেওয়ার কেউ নেই!

মালদ্বীপবাসীর ক্ষোভের মূল লক্ষ্যবস্তু পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ। মালদ্বীপের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রাজাপাকসের বিমানটির অবতরণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার পর মালদ্বীপের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, গোতাবায়া রাজাপাকসেকে বহনকারী সামরিক বিমানটি অবতরণের আগে নাশিদকে বিমানবন্দরে দেখা গিয়েছিল।

অনেকেই এ অবতরণ অনুমোদন বা কূটনৈতিক ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়ে স্পিকারের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে মালদ্বীপের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সময় শ্রীলঙ্কায় যেসব ভিন্ন মতাবলম্বী আশ্রয় পেয়েছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন নাশিদ। এছাড়া ক্ষমতাসীন মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টি শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে নির্বাসিতদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় মালদ্বীপের স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, সে দেশের রাজধানী মালে থেকে সিঙ্গাপুরে চলে গেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। তার দল শ্রীলঙ্কা পড়ুজানা পার্টির (এসএলপিপি) একটি সূত্র জানাচ্ছে, সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা দিতে পারেন গোতাবায়া।