১৫ বছর আগেই খুব কাছ থেকে মৃত্যু দেখেছিলেন গোতাবায়া

শ্রীলঙ্কার সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। এরপর তিনি কোথায় থিতু হবেন, তা নিয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি। কারণ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। অবশ্য ২০০৬ সালেই একবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন গোতাবায়া। খবর বিবিসি।

হামলার পর বড় ভাইয়ের সাথে গোতাবায়া রাজাপাকসে

২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে। তামিল টাইগারদের সাথে তখন শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। এরই মধ্যে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরের গোড়ায় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছিলেন শ্রীলংকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পালি পালিহাক্কারা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপাকসেও যাচ্ছিলেন সেই বৈঠকে যোগ দিতে।

যাত্রাপথে তারা প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ট্রাফিক সিগনালে অপেক্ষা করছিলেন। ট্রাফিক আলো সবুজ হবার পর গাড়িগুলো যখন চলতে শুরু করেছে, তখনই ঘটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। মূলত হামলা চালানো হয়েছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়াকে লক্ষ্য করেই। বিস্ফোরণে তার গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়।

আত্মঘাতী হামলায় পুড়ছে গাড়ি

ওই সময়ে শ্রীলঙ্কা সরকার ও তামিল টাইগারদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছিল। তারপরও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায়ই আসত বিস্ফোরণ, হামলা আর ধ্বংসযজ্ঞের নানা খবর। তামিল টাইগাররা তৎকালীন সরকারের আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, কর্মকর্তা এমনকি সেনাপ্রধান জেনারেল সারাথ ফনসেকাকেও তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল।

সে সময় গোতাবায়া রাজাপাকসে ছিল গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট। কারণ একদিকে তিনি ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, একইসঙ্গে তিনি সেসময় দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই।

হামলায় গোতাবায়ার কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, তার শার্টে রক্তের দাগ লেগে ছিল। প্রেসিডেন্টের বাসভবনে পৌঁছার পর বড় ভাই ও প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে তাকে জড়িয়ে ধরেন। পরে সবাই মিলে বৈঠকে অংশ নেন। কিন্তু সেদিন গোতাবায়াকে পুরোপুরি নিরাবেগ দেখা যাচ্ছিল। এত বড় হামলা থেকে বেঁচে যাবার পরও তিনি কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখাননি।

তবে পরবর্তী সময়ে রাজাপাকসেরা এই হামলাকে ব্যবহার করেছেন নিজেদের ভাবমর্যাদাকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য। তারা সে সময় জানিয়ে দেন, এই হামলার মাধ্যমে তামিলরা তাদের শান্তি আলোচনার সব সুযোগ শেষ করে দিল। এরপর শ্রীলঙ্কা সরকার তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে।

পরের তিন বছর শ্রীলংকার এ গৃহযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। উভয়পক্ষই নৃশংতার চরমে পৌঁছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া রাজাপাকসের নেতৃত্বে শ্রীলংকার সেনাবাহিনী ২০০৯ সালে তামিল টাইগারদের পরাস্ত করে এবং তাদের নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যা করে। শ্রীলংকার সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনহালা জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের কাছে যুদ্ধ জয়ের নায়ক হয়ে ওঠে রাজাপাকসে পরিবার।

তারপরের অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলে শ্রীলঙ্কার রাজনীতি। ওই হামলার ১৩ বছর পর ২০১৯ সালে গোতাবায়া রাজাপাকসে শ্রীলংকার অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং চলতি মাসেই গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। পরে সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগ পাঠিয়ে দেন।