নড়েচড়ে বসেছে বিসিবি, ডমিঙ্গোদের তলব

এবারের জিম্বাবুয়ে সফরটা দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রথমবারের মতো জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষে হারতে হয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এটা নিয়ে খুব একটা ‘মাথা ব্যথা’ না হলেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে ওয়ানডেতে সিরিজ হার। দীর্ঘ নয় বছর পর এই সংস্করণে জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। তাও আবার এক ম্যাচ বাকি থাকতেই।

বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো

একদিনের ক্রিকেটের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের হারের গল্পটা প্রায় একই। ব্যাটসম্যানদের এনে দেওয়া বড় সংগ্রহের ওপর দাঁড়িয়ে বল হাতে দুরন্ত সূচনা করেন বোলাররা। কিন্তু চাপ ক্রমবর্ধমান করতে পারেননি তামিম ইকবালের দল। প্রায় ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে দুটো ম্যাচেই রূপকথার জয় তুলে নেয় স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। তাদের স্বপ্নের জয়ের নায়ক সিকান্দার রাজা।

বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটো ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন এই ব্যাটসম্যান। প্রথম ম্যাচে তার সঙ্গী ছিলেন ইন্নোসেন্ট কায়া, দ্বিতীয় ম্যাচে রেজিশ চাকাভা। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়েছেন তারাও। কায়া-চাকাভাকে নিয়ে পরপর দুই ম্যাচে রেকর্ড জুটি গড়েন রাজা। টাইগাররা ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। জিম্বাবুয়ে তুলে নেয় অবিস্মরণীয় জয়। সিরিজ জয়ের পর বিশ্বজুড়ে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৫ নম্বর দলটি।

এমনকি বাংলাদেশ থেকেও পিঠ চাপড়ে দেওয়া হয়েছে রাজাদের। মুদ্রার বিপরীতে টাইগার শিবিরে রাজ্যের হতাশা। খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা তো আছেই, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে দলের কোচিং স্টাফদেরও। বিশেষ করে আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে না পারার দায়টা তাদেরই। রাসেল ডমিঙ্গোর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের মধ্যে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ব্যাপারটিই নেই।

সেখানে চোটজর্জর দল নিয়ে ‘ডরভয়হীন’ ক্রিকেট খেলে দেখিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ডমিঙ্গোদের এমন রণকৌশল নিয়ে প্রতিনিয়ত সমালোচনা হচ্ছে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে। নেট দুনিয়ায় তো বাংলাদেশের পুরোনো দিনের রণকৌশল নিয়ে বিস্তর চর্চা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

জিম্বাবুয়ে সফর শেষে কোচদের কোনো ছুটির পথ খোলা রাখেনি বোর্ড। সফরের পর সরাসরি ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে ডমিঙ্গো এবং তার সহকারীদের। আধুনিক ক্রিকেটের যুগে তাদের যে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো দরকার! তাদের ‘ব্রিটিশ আমলে’র কোচিংয়ের কারণেই মূলত মানসিকতা পাল্টাচ্ছে না বাংলাদেশের। এতে করে হতাশ দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রশাসন।

টাইগার ক্রিকেটারদের অবশ্য সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু এই ‘সীমিত’ শব্দের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। লঙ্কান এই কোচের অধীনে বাংলাদেশ ডরভয়হীন ক্রিকেট খেলেছিল। কোচ হিসেবেও এই লঙ্কান বেশ কঠোর ছিলেন। সেখানে ডমিঙ্গো অনেকটা কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তার মধ্যে কঠোরতা নেই বললেই চলে।

দুই ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ এখন হোয়াইটওয়াশের মুখে। আগামী বুধবার একই ভেন্যু হারারে স্পোর্টস গ্রাউন্ডে মান বাঁচাতে লড়বে টাইগাররা। সফর শেষে ১৯ আগস্ট দেশে ফেরার কথা দলের। পরদিন ডমিঙ্গোদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা জানালেন বিসিবি ক্রিকেটে পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।

সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কোচরা পেশাদার এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মেজাজের। কিন্তু আমাদের দলের আগ্রাসন নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখন আমরা তাদের বদলাতে পারব না। তাদের পরিকল্পনা আমাদের শুনতে হবে। তারা সম্ভবত ১৯ আগস্ট দেশে ফিরবেন। আমরা পরের দিন তাদের সঙ্গে বসতে পারি।’