স্বাধীনতা দিবসে বিলকিস বানুর ১১ ধর্ষককে মুক্তি!

২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিম নারী বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ ও তার পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে ভারত সরকার। গতকাল ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে এ ধর্ষকরা গোধরা সাবজেল থেকে ছাড়া পান।

সাজাপ্রাপ্ত ১১ ধর্ষক ও খুনী গোধরা সাবজেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন

গুজরাটে গণহত্যার সময় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর বর্বরতার যে সামান্য সংখ্যক ঘটনায় ভুক্তভোগীরা প্রাণে বেঁচে গেছেন এবং নিজেদের দুর্ভোগের কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন, তার মধ্যে বিলকিস বানু অন্যতম। ভারত ও বহির্বিশ্বের প্রচারমাধ্যমের নজরে এসেছে বিলকিস বানু গণধর্ষণ মামলা।

গুজরাটে বিজেপি-দলীয় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ওই গণহত্যার সময় রাধিকপুর গ্রামের বিলকিস বানু ও তার মা সহ চার নারীকে ধর্ষণ ও জঘন্য রকমের নির্যাতন করা হয়েছিল। ওই গ্রামের ১৭ জন মুসলিম অধিবাসীর মধ্যে আটজনের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল, ছয়জনের কোনো খোঁজ মেলেনি।

স্বাধীনতা দিবসে বিলকিস বানুর ১১ ধর্ষককে মুক্তি দিয়েছে ভারত

২০০২ সালের ৩ মার্চ ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর প্রাণে বেঁচেছিলেন কেবল তিনজন। এদেরই একজন বিলকিস। ধর্ষকদের হাতে প্রাণ হারায় তার তিন বছর বয়সী কন্যা। নির্যাতনের সময় বিলকিস ছিলেন ছয় মাসের অন্তঃসত্তা। গর্ভের সন্তানটি শেষ পর্যন্ত বাঁচেনি। তিনি নিজে মৃতের ভান করে তিন ঘন্টার বেশি সময় পড়েছিলেন এবং একপর্যায়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর সেখান থেকে পালিয়ে তিনি এক আদিবাসী নারীর কাছে আশ্রয় নেন। পরে ওই নারীর দেওয়া পোশাক পরে তিনি লিমখেদা পুলিশ স্টেশনে গিয়ে নিজেরই প্রতিবেশী ধর্ষক ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিলকিস বানু গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামীর সাজা মওকুফ করে সোমবার তাদের মুক্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, গোধরা সাবজেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ ধর্ষককে মিষ্টি খাইয়ে বরণ করে নিচ্ছেন স্থানীয় বিজেপি নেতাকর্মীরা।

১১ ধর্ষকের মুক্তির খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নয়াদিল্লির আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী মাহমুদ প্রাচা বলেছেন, ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার আরেকটি প্রমাণ হলো তাদের এ মুক্তি পাওয়া। সরকার গুজরাটে অপরাধীদের সুরক্ষা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটাই রক্ষা করল।

সিপিআই-এম নেত্রী ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি কবিতা কৃষ্ণন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ট্যাগ করে এক টুইটে লিখেছেন- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যখন গতকাল স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে নারীদের সম্মান করার কথা বলছিলেন, তখন কি এটাই বুঝিয়েছিলেন যে গুজরাটে আপনার দলের সরকারের মুক্তি দেওয়া ধর্ষকদের অভিনন্দন জানিয়ে লাড্ডু খাওয়াতে হবে? বিলকিস বানু একজন মুসলিম নারী, এজন্যই কি ধর্ষকদের মিষ্টিমুখ করানো হচ্ছে?’