কিয়েভ: রাশিয়ার তেল নয়, ইউক্রেনীয়দের রক্ত কিনছে ভারত

ভারতের কাছ থেকে অনেক বেশি বাস্তব সমর্থন আশা করেছিল ইউক্রেন, কিন্তু নয়াদিল্লি তাদের হতাশ করেছে। উল্টো রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার মাধ্যমে তারা কার্যত ইউক্রেনের রক্ত কিনছে। গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা। খবর দ্য হিন্দু।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা

কুলেবা বলেন, ভারত যখন রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কিনবে, তখন তাদের বুঝতে হবে, এর বিনিময় ইউক্রেনের রক্ত দিয়ে দিতে হবে। রাশিয়ান প্রতিটি ব্যারেল তেলে ভারত যা পায়, তাতে ইউক্রেনের রক্তের একটি বড় অংশ রয়েছে।

আমরা সবসময় ভারতের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ ও উন্মুক্ত ছিলাম। রাশিয়ার অভিযানের পর আমি ভারতীয় ছাত্রদের নিরাপদে দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেছিলাম। কিন্তু ভারতের কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশামাফিক সমর্থন পাইনি। আমরা ভারতের কাছ থেকে ইউক্রেনের প্রতি আরও বাস্তব সমর্থন আশা করেছিলাম।

রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল কিনেছে ভারত

এক প্রশ্নের জবাবে কুলেবা ভারত ও ইউক্রেনকে দুটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, এ দুটি দেশের অনেকগুলো অপরিহার্য মিল রয়েছে। এই দুই গণতন্ত্রকে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে।

এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, তেল ও গ্যাসের দাম এখন অযৌক্তিকভাবে বেশি। এশিয়ার জ্বালানি সরবরাহকারীরা এ পরিস্থিতিতে ইউরোপমুখী হয়ে যায়, ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে যেখানে তেল-গ্যাসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে আমরা বিপদে পড়ে গেছি। আমরা আমাদের বিষয়ে খেলামেলা ও সৎ। আমার দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় মাত্র দুই হাজার ডলার। তাদের পক্ষে উচ্চদামের জ্বালানি কেনা সম্ভব নয়। ফলে আমরা যেখানে স্বল্পমূল্যে জ্বালানি পেয়েছি, সংগ্রহ করেছি।

জয়শঙ্কর বলেন, ভারত রাশিয়াসহ একাধিক দেশ থেকে জ্বালানি সংগ্রহের ক্ষেত্রে চালাকির কোনো চেষ্টা করেনি বরং বিশ্ব বাস্তবতাকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।

ইউক্রেনের মন্ত্রী এ ব্যাপারে বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের জ্বালানি কেনার সিদ্ধান্ত কিয়েভকে হতবাক করেনি, কিন্তু এটা সত্যি যে, এর মাধ্যমে রাশিয়া অর্থোপার্জন করছে। এ সময় তিনি মনে করিয়ে দেন, লড়াই শুরু হওয়ার পর ইউক্রেন প্রায় ২০ হাজার ছাত্র ও চাকরিজীবীকে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। বিষয়টি নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অন্তত তিন দফা ফোনালাপ হয়েছে। তারপরও চলমান সংঘাতে নয়াদিল্লির এ অবস্থানে চূড়ান্তভাবে হতাশ হয়েছে কিয়েভ।