ঋষি ও ভারতের স্বপ্নভঙ্গের নেপথ্যে

বরিস জনসন বলেছিলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চাকরিটা খুবই ভালো। তাই তিনি সহজে এ চাকরি ছাড়তে চান না। কিন্তু ভারতীয় বংশোদ্ভূত অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদের পদত্যাগের ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বরিস সরকারের পতন।

ঋষি সুনাক ও তার স্ত্রী অক্ষতা

কয়েকদিনের মধ্যে বরিস জনসন বাধ্য হন ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিতে। নতুন করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নামেন প্রায় ২০ জন প্রার্থী। শেষপর্যন্ত টিকে ছিলেন ঋষি সুনাক ও লিজ ট্রাস। ভোটাভুটির পর গতকাল সোমবার পাওয়া যায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম। চূড়ান্ত পর্যায়ে কনজারভেটিভ দলের নেতারা ভরসা রাখেন লিজ ট্রাসের উপর।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এরপর ঋষি সুনাককে দিয়ে যুক্তরাজ্য জয়ের আকাঙ্ক্ষা ছিল ভারতীয়দের। সে আশা এ দফায় অন্তত পূরণ হয়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ঋষি সুনাকের পরাজিত হওয়ার নেপথ্য কারণগুলো বের করার চেষ্টা করেছে।

নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস

সেখানে বলা হয়, প্রথম থেকে জোর লড়াই চালিয়ে আসছিলেন ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাতা ঋষি সুনাক। তবে শেষমেশ তার পরাজয়ের পেছনে নিজের অতীত রেকর্ড যেমন দায়ী, অন্যদিকে তার স্ত্রীও কম দায়ী নন।

জানা গেছে, বরিসের আমলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব যেভাবে সামলেছেন ঋষি সুনাক, তাতে খুশি নয় কনজারভেটিভ দলের সদস্যরাই। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, সুনাকের করনীতি অপছন্দ ছিল ৮ শতাংশ সদস্যর। আবার ৫ শতাংশ সদস্যের অভিযোগ, সহজে তার কাছে পৌঁছনো যেত না। আবার ‘ডিপ্রাইভড আরবান এরিয়াস’র তহবিলের অর্থ ‘কেন্ট কমিউটারস বেল্ট’ প্রকল্পে ঢালার পরামর্শ দিয়েছিলেন সুনক, যা অনেকের পছন্দ হয়নি। অন্যদিকে দলের একাংশ মনে করেন, নিজ স্বার্থে বরিস জনসনের পেছন থেকে ছুরি মেরেছিলেন সুনাক। বরিসকে ইস্তফা দিতে কার্যত তিনিই বাধ্য করেছিলেন।

আবার তার ফ্যাশন ডিজাইনার স্ত্রী অক্ষতাকে নিয়েও কম বিতর্ক নেই। পেশার কারণে আরোপিত কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রভাব খাটিয়ে সেই করের আওতার বাইরে চলে আসেন তিনি। শোনা যায়, অক্ষতার সম্পত্তি ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের চেয়েও বেশি। তারপরও কর ফাঁকির এই বিষয়টি ভালোভাবে নেননি ভোটাররা।

আবার রাশিয়াতে ইনফোসিসের অফিস থাকায় অক্ষতার সাথে মস্কোর বিশেষ সম্পর্ক থাকার অভিযোগ উঠে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যেটি বেশ খারাপ প্রভাব ফেলে ঋষি সুনাকের ওপর।

অন্যদিকে লিজ ট্রাস এসব অভিযোগ থেকে মুক্ত। ফলে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃবৃন্দ তাকেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। আর হৃদয় ভেঙেছে ভারতীয়দের।