ভুল করে ব্রিটেন-স্পেনের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি, ফেরত চাইছে ফ্রান্স

ভুল করে ব্রিটেন ও স্পেনের কাছে ৬ কোটি ইউরো মূল্যের বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে ফ্রান্স। গত সপ্তাহে ফ্রান্সের বিতরণ কোম্পানি স্ট্রাসবুর্গ ইলেকট্রিসিটি দুই দফায় প্রায় ৮ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ ইন্ট্রা-ইউরোপিয়ান ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড গ্যাস ট্রেডিং নেটওয়ার্কে ছেড়ে দেয়। ব্রিটেন ও স্পেনের দুটি কোম্পানি ওই বিদ্যুৎ কিনে নেয়। লোডশেডিং সামাল দিতে জেরবার ফ্রান্স এখন জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ফেরত চাইছে।

পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে বিভ্রাটের কারণে ফ্রান্সে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংকট বেড়েছে

স্ট্রাসবুর্গ ইলেকট্রিসিটির পক্ষ থেকে ফ্রান্সের জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা আরটিইকে জানানো হয়েছে, গত মঙ্গল ও বুধবার কোম্পানির আইটি বিভাগ দুই দফায় যথাক্রমে ২ দশমিক ০৩ গিগাওয়াট ও ৫ দশমিক ৭৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ ইন্ট্রা-ইউরোপিয়ান ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড গ্যাস ট্রেডিং নেটওয়ার্কে বিক্রি করে দেয়। আইটি বিভাগের ভুলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ট্রেডিংয়ে অংশ নেয় স্ট্রাসবুর্গ ইলেকট্রিসিটি।

কোম্পানিটি বলেছে, যে পরিমাণ বিদ্যুৎ দুদিনে বিক্রি করা হয়েছে তার ঘাটতি পূরণের সক্ষমতা স্ট্রাসবুর্গ ইলেকট্রিসিটির নেই। এ কারণে ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ব্রিটেন ও স্পেনকে জরুরি বার্তা দেওয়া হয়েছে যাতে তারা ফ্রান্সে যত বেশি সম্ভব বিদ্যুৎ পাঠাতে প্রস্তুত থাকে।

রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় কয়েক দশকের প্রকটতম বিদ্যুৎ সংকটের মুখে পড়েছে ইউরোপ। একদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে উৎপাদন। ফ্রান্সে এ সংকট ভিন্ন চেহারা পেয়েছে। ফ্রান্সের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হচ্ছে পারমাণবিক শক্তি, যার একের পর এক চুল্লি কারিগরি সমস্যার কারণে বন্ধের খবর আসছে।

ফরাসি সঞ্চালক কোম্পানি আরটিই জানিয়েছে, রাতের বেলায় ফ্রান্সে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য প্রস্তুত হতে প্রতিবেশী দেশগুলোকে ইউরোপিয়ান অ্যাওয়ারনেস সিস্টেমের মাধ্যমে এলার্ট পাঠানো হয়েছে। ব্রিটেনের ন্যাশনাল গ্রিড ও স্পেনের পাওয়ার নেটওয়ার্কের দুটি সূত্র ফ্রান্সের তরফ থেকে এলার্ট পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে।

বিদ্যুৎ বিক্রির পরমূহূর্তেই তা ফেরত চাওয়া অথবা এমন জরুরি এলার্ট পাঠানোর ঘটনা ইউরোপে বিরল। বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালনে নিয়োজিত কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা জানান, বছরে এমন এলার্টের ঘটনা এক-দুটির বেশি ঘটে না। ফ্রান্সের এলার্ট থেকে যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে আসন্ন শীতে ইন্ট্রা-ইউরোপিয়ান ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড গ্যাস ট্রেডিংয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্ট্রাসবুর্গ ইলেকট্রিসিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, রিব্যালেন্সিং অপারেশনস শেষ হবার পর কোম্পানির মজুত বিদ্যুতে ঘাটতি দেখা যায়। ভুলবশতঃ ট্রেডিংয়ের বিষয়টি তখন সামনে আসে। এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে।

চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান মেটাতে ইউরোপের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো হরহামেশা পরস্পরের সঙ্গে ট্রেডিংয়ে নিয়োজিত হয়। কিন্তু স্ট্রাসবুর্গ ইলেকট্রিসিটির যে ট্রেড নিয়ে সংকট, সেটা অস্বাভাবিক রকমের বড়। এমন বহু পারমাণবিক চুল্লি আছে, যার উৎপাদন-সক্ষমতা এক গিগাওয়াট। এটুুক বিদ্যুতে কোনো কোনো ছোট শহরের বছর চলে যায়। এ অবস্থায় প্রায় আট গিগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি চাট্টিখানি কথা নয়।