বাংলাদেশের টার্গেট মধ্যপ্রাচ্য, বাজি সৌদি আরব

মধ্যপ্রাচ্যে বাণিজ্যিক উপস্থিতি বাড়াতে সৌদির বাজারকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। আগামী মাসের শুরুতে রিয়াদে অনুষ্ঠেয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মেলাকে সামনে রেখে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে উপস্থিতি বৃদ্ধির আশা করছেন

আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইপিবি আগামী ৬-৮ অক্টোবর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মেলা আয়োজন করতে চলেছে। আসন্ন এ মেলা সৌদি আরবের বাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে ইপিবি।

এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে বাংলাদেশের রপ্তানির সিংহভাগই সে দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে বিক্রির টার্গেট করে পাঠানো পণ্য। এ রপ্তানির পরিমাণ খুব বেশি নয়।

গত বছর সৌদিতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ কোটি ডলার। চলতি বছরের শেষ নাগাদ সৌদি বাজারে রপ্তানির পরিমাণ ৩৫ কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায় ইপিবি। একইসঙ্গে সংস্থাটি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে চায়।

ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, সৌদি আরব থেকে আমরা আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে নিজেদের পণ্য বাজারজাত করতে পারি। এছাড়া রপ্তানি গন্তব্য হিসেবেও আমরা সৌদি আরবকে টার্গেট করেছি। কারণ, সেখানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির উপস্থিতি রয়েছে এবং সৌদি আরবের ভৌগোলিক অবস্থানও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

রপ্তানি বাণিজ্য বহুমুখী ও বৈচিত্র্যময় করতে চায় ইপিবি। কেননা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানি বলতে প্রধানত গার্মেন্টস পণ্য, যা দেশের এক নম্বর শিল্পখাত। ৪০ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানকারী তৈরি পোশাক খাত দেশের জিডিপিতে ১১ শতাংশ অবদান রাখছে। দেশের মোট রপ্তানির ৮০ ভাগ জুড়েও আছে এ খাত।

এ এইচ এম আহসান বলেন, তৈরি পোশাক ও খাদ্যপণ্য রপ্তানির পরিবর্তে আমরা হালকা শিল্পপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে চাই। তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরাও সৌদি আরবে উপস্থিতি বাড়াতে চায় বলে জানা গেছে।

এইচঅ্যান্ডএম, জারাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক প্রস্তুতকারী ইমপ্রেস-নিউটেক্স কমপোজিট টেক্সটাইলসের পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের তৈরি পোশাক পণ্য কিনে থাকে।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের প্রথম সারির বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করি। ব্রিটেনের কোনো পোশাকের দোকানে ঢুকলে দেখি যে জামাটি বাংলাদেশে প্রস্তুত করা হয়েছে। তাহলে আমরা বসে থাকব কেন? এর চেয়ে সৌদি আরবে নিজেদের বাজার তৈরি করাই ভালো।

রিয়াদে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মেলায় অংশগ্রহণেচ্ছু কোম্পানির মধ্যে ইমপ্রেস-নিউটেক্স কমপোজিট টেক্সটাইলস একটি। এ মেলা সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে বাংলাদেশি গার্মেন্টস শিল্পের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে বলে আশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, মেলায় আরও অনেক কোম্পানি নিজেদের পণ্য উপস্থাপন করবে। এসব স্টল থেকে আমরা সেখানকার বায়ারদের সঙ্গে সাক্ষাত ও যোগাযোগ করব। সৌদির বাজারে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় আমরা যথেষ্ট পিছিয়ে আছি। তবে আগামী তিন থেকে চার বছরে আমরা সেখানে রপ্তানি ৩০০-৪০০ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়াতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।

রিয়াদে আগামী মাসের মেলার মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণেরও চেষ্টা করা হবে। গত মার্চে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের ঢাকা সফর এবং দুই দেশের মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপের পর ঢাকা-রিয়াদ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চাঙ্গাভাব বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) প্রতিষ্ঠা করছে বাংলাদেশ সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আবদুল মোমেন সফররত সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ঢাকার তরফ থেকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।