টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: ফেভারিট-আন্ডারডগ কারা

টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এই একটা সমস্যা, কিছু অনুমান করাই কঠিন। কখন যে কী হয়ে যায়। ব্যাক ফুটে পড়ে গেলে সেখান থেকে ফেরা মুশকিল। কখনো বা দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন দেখা যায়। টেস্ট এবং ওয়ানডে সংস্করণের সঙ্গে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে এখানেই বড় তফাৎ। এমন প্রেক্ষাপটে কোনো দলের গায়ে ফেভারিটের তকমা সাঁটানো যায় নাকি!

বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন গতকাল ফটোসেশনে অংশ নেন ১৬ দলের অধিনায়ক

তবু কোনো টুর্নামেন্ট আসলে ফেভারিট খোঁজা চিরায়িত একটা ধারা। এই ধারায় ভারত ও ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাখা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এই দুটি দল টি-টোয়েন্টিতে ব্র্যান্ডিং ক্রিকেট খেলছে। ফেলনার নয় পাকিস্তানও। ওদিকে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার যেভাবে এশিয়া কাপে পুনর্জন্ম হলো তাদেরই বাতিলের খাতায় রাখা যায় কীভাবে।

স্বাগতিক দেশ অস্ট্রেলিয়া। এই টুর্নামেন্টটা তাদের জন্য রাজত্ব ধরে রাখার উপলক্ষ্য। ওয়ানডে সংস্করণে নিয়মিত বিশ্বকাপ জেতা দলটার টি-টোয়েন্টির মহাযজ্ঞ জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে সপ্তম আসর পর্যন্ত। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে তো প্রায় ভাঙাচোরা একটা দল নিয়েই স্বপ্নপূরণ করেছিল অজিরা। এবার ঘরের মাঠে খেলার বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে তারাই।

এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ‘বড়’ দলগুলোর মধ্যে এই দুটি দলই খেলছে বাছাইপর্ব। তাদের সুপার ফোরে ওঠা নিয়ে সংশয়বাদী লোকের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায়। মূলপর্বের লড়াইয়ে এই দুটি দলকেও তাই বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।

বিশ্বকাপের আগে দারুণ ফর্মে আছে ইংল্যান্ড। কদিন আগে অস্ট্রেলিয়াকে তাদেরই মাটিতে সিরিজে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে ইংলিশরা। বৃষ্টি বাধা হয়ে না দাঁড়ালে স্বাগতিকদের হয়তো ধবলধোলাই করতে পারতো তারা। তবে ছন্দ হারালেও অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার বাছাইপর্ব খেললেও শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হিসেবের বাইরে রাখা যাবে না।

ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হয়েছে পাকিস্তান। এই টুর্নামেন্ট দিয়ে পাকিস্তান কাটিয়ে উঠেছে ওপেনিং নির্ভরতা। বোলিং আক্রমণের সেরা অস্ত্র শাহিন শাহ আফ্রিদির অভাবটাও বুঝতে দিচ্ছেন না বাবর অ্যান্ড কোং। আফ্রিদি শতভাগ ফিট হয়ে দলে ফিরলে পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।

কয়েক বছর ধরে উপভোগ্য ক্রিকেট উপহার দিয়ে আসা নিউজিল্যান্ডকে এবারো দৌড়ে রাখতে হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশে বিশ্বকাপ বিধায় সুযোগ আছে তাদেরও। ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে হয়তো শিরোপা জিততে পারেনি তারা, কিন্তু অনিয়মিত একাদশ নিয়ে তারা যেভাবে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে তাতে কিউইদের নিয়ে আশা দেখাই যায়।

ক্রিকেটের অভিশপ্ত দলের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারও চোকার্স অপবাদ ঘোচানোর সুযোগ পাচ্ছে প্রোটিয়ারা। দলটির একমাত্র ভাবনার কারণ অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার অফ ফর্ম। যদিও সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিচ্ছেন অন্যরা। সুপার টুয়েলেভে সরাসরি খেলা আরেক দল বাংলাদেশের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মূলপর্বে যে দলের জয়খরা কাটানোই বড় চ্যালেঞ্জ তাদের আবার ফেভারিটের তালিকায় রাখা যায় নাকি!

২২ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের মূলপর্বের লড়াই। রোমাঞ্চর এই লড়াইয়ে ফেভারিট কিংবা আন্ডারডগ খোঁজা কাগজে-কলমের হিসেবের মতোই। কারণ মাঠের ক্রিকেট অনিশ্চয়তায় ভরপুর। টি-টোয়েন্টি তো গৌরবময় অনিশ্চয়তার স্বার্থকতাই প্রমাণ করছে। যেমনটি ফুটবলে। ফুটবল বিশ্বকাপে সেরা দলের ট্রফি জেতার ঘঠনা বিরল। একইভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সেরা দলের শিরোপা জয়ের উদাহরণ খুব একটা নেই। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ১৩ নভেম্বর মেলবোর্নের ফাইনালে।