ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি জড়াচ্ছে ইরান?

ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব আরও জোরদার হয়েছে। দেশ দুটি দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল জুড়ে মিত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ। সর্বশেষ ইউক্রেনে ইরানের প্রচ্ছন্ন উপস্থিতি রাশিয়ার সাথে ইরানের বন্ধুত্ব আরও শক্ত হয়েছে। এতে সিরিয়ায় আসাদ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে এক জোট হওয়া দেশ দুটির পরবর্তী বন্ধুত্বপূর্ণ পথ আরও প্রসারিত হয়েছে। এখন ইরান সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধে জড়াবে কিনা- এক্ষেত্রে দেশটির পলিসি কী ইত্যাদি বিশ্লেষণ করেছে টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

ক্রিমিয়ায় তেহরানের ড্রোন প্রশিক্ষক মোতায়েনের বিষয়টি ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের সরাসরি জড়িত হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে

আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্প পরিচালক আলি ভায়েজ মনে করেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এখন বুঝতে পেরেছেন, ইউক্রেনে পুতিনের ব্যর্থতা ইরানকে দুর্বল করে দিতে পারে। একইভাবে রাশিয়ার পরাজয় দুদেশের মিত্রদেরও এই অঞ্চলে দুর্বল করে দেবে।

ভায়েজ টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, ইরান সিরিয়াতে আসাদ সরকারকে বাঁচানোর জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। একইভাবে ইউক্রেনেও রাশিয়ার পক্ষে দেশটি যুদ্ধে লিপ্ত বলা যায়। তবে এ সময়ে ইরানে চলমান বিক্ষোভ তেহরানের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় বলেও তিনি মনে করেন।

ভায়েজ মনে করেন, মস্কো ও তেররানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ইরান সম্ভবত ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে লড়তে স্থলবাহিনী সরবরাহ করবে না। ঘটনা সিরিয়ার মতোই ঘটছে। কারণ সিরিয়ায়ও ইরান শিয়া প্রক্সি বাহিনীগুলো দিয়ে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে নেমেছে।

ওই বিশ্লেষক বলেন, রাশিয়াকে সমর্থনে ইরানের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রাশিয়ার পক্ষে তারা অস্ত্র-সরঞ্জামে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারবে, কিন্তু স্থলবাহিনী পাঠিয়ে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো সক্ষমতা ইরানের নেই।

ভায়েজের মতো একই চিন্তা করছেন তেহরান ভিত্তিক সামরিক বিশ্লেষকরা। তারাও ইরানপন্থী শিয়া মিলিশিয়াদের একটি গ্রুপ ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্ত হতে পারে বলে মনে করেন। তবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ ইউক্রেন ও সিরিয়া ইরানের জন্য একটি ভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র।

সাবেক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড এরিকসন বলেন, আসাদ বিরোধী বিদ্রোহ ইরানের বিরুদ্ধে একটি ঘনিষ্ঠ হুমকি ছিল। কারণ সিরিয়া থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিভিন্ন সংঘাতে শিকড় গেড়েছিল ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইজিআরসি)। এই লড়াই ইরানের রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু ইউক্রেনের পরিস্থিতি সিরিয়া বা লেবাননের পরিস্থিতি থেকে আলাদা।

তবে ক্রিমিয়ায় তেহরানের ড্রোন প্রশিক্ষক মোতায়েনের বিষয়টি ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের সরাসরি জড়িত হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ইরান যদি ড্রোন পাইলটদের বেতনভুক্ত রাশিয়ান ভাড়াটে হিসেবে নিয়োগ করে, তাহলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বরং ইরানের এই অন্তর্ভুক্তি ইরানি কর্মকর্তাদের যুদ্ধের যে অভিজ্ঞতা দেবে, তা তেহরানের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।