ফোনালাপে আগের অবস্থানেই ইউক্রেন-ইরান

ইউক্রেনে চালানো হামলায় রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করছে ইরান, এ ইস্যুতে ফোনালাপে ইউক্রেন ও ইরান নিজেদের আগের বক্তব্যের ওপরই অটল রয়েছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানের সাথে ফোনালাপে তিনি রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে তেহরানের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। তবে ইরান তাদের আগের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে জানিয়েছে, তারা রাশিয়াকে ড্রোনসহ কোনো অস্ত্রই দিচ্ছে না। খবর আলজাজিরা।

হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান ও দিমিত্রো কুলেবা

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেন ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহ করার জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেছে। এ মাসের শুরু থেকে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের শক্তি অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করছে। এর ফলে কিয়েভের পাশাপাশি প্রায় পুরো দেশেই ব্ল্যাকআউটের শিকার হচ্ছে দেশটির ৪০ লাখের বেশি নাগরিক।

ইউক্রেন দাবি করে, এসব হামলায় মস্কো ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ অ্যাটাক ড্রোন ব্যবহার করছে। তবে শুরু থেকেই ইরান বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেছে, যে কোনো লড়াইয়ে তারা সব সময় নিরপেক্ষ থাকে। কোনো পক্ষকেই কোনো অস্ত্র তারা সরবরাহ করে না। ফলে ইউক্রেনের অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

কিয়েভের আকাশে রাশিয়ার ড্রোন

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা এক খবরে জানিয়েছিল, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি পরিষ্কার করতে ইউক্রেনের সাথে আলোচনায় বসারও আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেলকে ইউক্রেনে ব্যবহৃত ড্রোনগুলোর তদন্তে অংশ নিতে ইরান আগ্রহী বলেও অবহিত করেন।

এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা এক টুইটে লেখেন, আজ আমি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি কল পেয়েছি। ওই ফোনালাপে আমি ইরানকে অবিলম্বে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করতে এবং ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করতে রাশিয়ার কাছে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানিয়েছি।

তবে এর জবাবে নিজেদের আগের বক্তব্যেই অটল থাকেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইরানের সাথে রাশিয়ার সামরিক চুক্তি থাকায় তেহরান মস্কো থেকে অস্ত্র লেনদেন করে থাকে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এমন কিছু ঘটেনি। ইরাকের চাপিয়ে দেওয়া আট বছরের যুদ্ধে ইরান যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তাতে তার পক্ষে ইয়েমেন বা ইউক্রেন যুদ্ধকে সমর্থন করা সম্ভব নয়।

এ মাসের শুরু থেকে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা জোরদার করে। এ সময় সশস্ত্র ড্রোন রাশিয়ার অস্ত্রাগারের একটি প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন গতকাল শুক্রবার বলেছে, তারা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে তিন শতাধিক রাশিয়ান ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে, এগুলোর প্রায় সবই ইরান থেকে আমদানি করা শাহেদ -১৩৬ মডেলের।

এর আগে ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহানাত কিয়েভে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাশিয়া ইরানের কাছে আনুমানিক ২,৪০০টি কামিকাজে ড্রোনের অর্ডার দিয়েছে।

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার জন্য ইরানি ড্রোন ব্যবহার করেছে কি না, তা তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। দেশ তিনটির এমন আহ্বানের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছিলেন, পুরো বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।