দেশ ছাড়ছেন শ্রীলঙ্কার চিকিৎসকরা, বিপাকে স্বাস্থ্যসেবা

করোনায় পর্যটক হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। খুঁড়িয়ে চলা সে অর্থনীতি পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়ে ইউক্রেনে হামলার পর। ফলে অন্যান্য কিছুর সাথে স্বাস্থ্যসেবাও পড়েছিল ভীষণ সংকটে। ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর ঘাটতিতে পড়ে যায় দেশটির চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো। সরকার পরিবর্তনের পরও তাতে তেমন কোনো পার্থক্য আসেনি। ওই খাতে এবার নতুন সংকট শুরু হয়েছে। কারণ দেশটির চিকিৎসকরা এখন নিজেদের ক্যারিয়ার ও জীবিকা বাঁচাতে পাড়ি দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমের দেশগুলোতে। খবর আরব নিউজ।

শ্রীলঙ্কার পুরো চিকিৎসা খাতই এখন সংকটের মুখে

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। ২২ মিলিয়ন জনসংখ্যার দ্বীপ রাষ্ট্রটি গত এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। কারণ রিজার্ভ সংকটে তারা বৈদেশিক ঋণগুলো পরিশোধ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছিল।

এ সংকটের শুরু থেকে চিকিৎসকরা বলছিলেন, ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে তারা রোগীদের সময়মতো ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিতে পারছেন না। দেশটির ৮৫ শতাংশ চিকিৎসা সামগ্রীই বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। দিন দিন সংকট আরও বেড়েছে। সরকার পরিবর্তন হলেও দেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতির তোমন কোনো উন্নয়ন হয়নি।

বিক্ষোভে চিকিৎসকেরা

এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা সুযোগ পেলেই দেশ ছাড়ছেন। শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরো জানায়, লোকজনের দেশত্যাগের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। সংস্থাটির জেনারেল ম্যানেজার প্রিয়ন্ত সেনানায়েকে জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন পেশার লোকজনের দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। অনেক ডাক্তারও দেশ ছাড়ছেন।

গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বছরের প্রথম আট মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেরই অন্তত ৫০০ জন ডাক্তার বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। অবশ্য এর প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে।

আবার শ্রীলঙ্কা মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি ডা. রুভাইজ হানিফা বলেছেন, বেসরকারি খাতে কর্মরত অন্তত ১০০ জন ডাক্তার বিদেশে চলে গেছেন। এছাড়া যারা প্রশিক্ষণের জন্য আগে থেকেই বিদেশে ছিলেন, তারা আর দেশে ফিরে আসেননি। তাদের হিসাবটা এখানে ধরা হয়নি।

ডা. হানিফা জানান, শ্রীলঙ্কা থেকে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের জন্য তারা মূলত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যায়। চাকরির জন্য যায় অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডে। আর মিডল গ্রেডের ডাক্তাররা যান মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিশেষ করে ওমান এবং ইউএইতে। তাদের যেতে বাধা দেওয়ার কোনো উপায় ছিল না বলেও উল্লেখ করে এই চিকিৎসক নেতা।

শ্রীলঙ্কার প্রধান কিডনি প্রতিস্থাপন কেন্দ্র কলম্বোর ওয়েস্টার্ন হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার ওমর শরিফ বলেন, দ্বীপরাষ্ট্রটি ইতোমধ্যে কিডনি রোগের চিকিৎসার ২৫ শতাংশ বিশেষজ্ঞকে হারিয়েছে। দেশের মোট ৪০ জন নেফ্রোলজিস্টের মধ্যে ১০ জন দেশ ছেড়েছেন। তারা মূলত যুক্তরাজ্যেই বেশি যাচ্ছে। কারণ সেখানে আকর্ষণীয় বেতনের চাকরির পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা লাভেরও সুযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলম্বোর একটি নেতৃস্থানীয় সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, যেসব চিকিৎসক বিদেশে চলে যাচ্ছে, তারা সহসাই আর দেশে ফিরছেন না। কারণ দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় তারা তাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করতে পারছেন না। মানুষের চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না। এটি একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি।