হ্যালোইন ট্র্যাজেডি: এখনো নিখোঁজ কয়েক হাজার মানুষ

সিউলে হ্যালোইন উদযাপনে গিয়ে পদপিষ্ট ও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের বিষয়ে সিউলের হাননাম-দং কমিউনিটি সার্ভিস সেন্টারে খোলা অস্থায়ী অনুসন্ধান কেন্দ্রে আজ সকাল থেকে ৩ হাজার ৫৮০ জনের সন্ধান চেয়ে টেলিফোন কল এসেছে। খবর রয়টার্স।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়ল আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন

অনুসন্ধান কেন্দ্রে প্রতি ঘণ্টায় এ কল সংখ্যার আপডেট করা হচ্ছে। নিখোঁজ স্বজনের সন্ধানে আসা মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। কেউ কেউ ওই কেন্দ্রে কর্মরতদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন। নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও অনুসন্ধান কেন্দ্রে প্রিয়জনের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন উদ্বিগ্ন মানুষেরা।

আইভরিকোস্টের নাগরিক ফিলোমেন অ্যাবি তার ২২ বছর বয়সী ছেলে মাসেলাকে খুঁজতে কেন্দ্রে এসেছেন। ইতাইওয়ানের একটি ক্লাবে কাজ করত মাসেলা। গতকাল সন্ধ্যায় কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা ছাড়ে সে। মায়ের সঙ্গে মাসেলার ওটাই শেষ দেখা। ফিলোমেন অ্যাবি বলেন, আমি তার নাম্বারে কল করেছি। সে ফোন ধরেনি।

স্বাভাবিক সময়ে জন্ম নিবন্ধন ও বাসাবাড়ি নিবন্ধনের কাজ করা কর্মকর্তারা ফিলোমেন অ্যাবির মতো উদ্বিগ্ন মানুষদের সহায়তায় ব্যস্ত রয়েছেন। অনেকগুলো ইমার্জেন্সি ফোন লাইনে মুহুর্মুহু কল আসছে। নিখোঁজ স্বজনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে নানা প্রশ্ন করছেন কলাররা। অনুসন্ধানের জবাব দিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কর্মকর্তারা।

১৮ বছর ধরে সিউলে বসবাস করছেন ফিলোমেন অ্যাবি। অনুসন্ধান কেন্দ্রে নিজের ছেলের বিষয়ে কোনো খোঁজ না পেয়ে তিনি ‘কেউ আমাকে সত্য কথা বলছে না’ মন্তব্য করে আইভরিকোস্ট দূতাবাসের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

দক্ষিণ কোরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লি সাং-মিন দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, নিহতদের প্রায় ৯০ শতাংশেরই শনাক্তকরণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১০ শতাংশ মরদেহ শনাক্তের কাজ চলছে। তিনি বলেন, বিদেশি নাগরিক ও টিনেজ বয়সী স্থানীয় নাগরিক যারা এখনো নিবন্ধিত নন, তাদের শনাক্ত করতে সময় বেশি লাগছে। এসব ক্ষেত্রে সরাসরি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরিচয় নিশ্চিত হতে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত ও ৮২ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৯৭ জন নারী। নিহতদের বেশিরভাগই ২০-৩০ বছর বয়সী। এখন পর্যন্ত ২২ জন বিদেশির প্রাণহানির কথা জানা গেছে। এদের মধ্যে চীনের ৪ জন, ইরানের ৪ জন ও রাশিয়ার ৩ জন নাগরিক রয়েছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, নরওয়ে, কাজাখস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার একজন করে নাগরিক রয়েছেন। নিহত অপর বিদেশির জাতীয়তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সিউলের ইয়োংসান এলাকায় গতকাল রাতে হ্যালোইন উদযাপনের জন্য সমবেত হয়েছিল কয়েক লাখ তরুণ-তরুণী। এদের একটি অংশ ভিড় করেছিল শহরতলীর হ্যামিলটন হোটেলের কাছে একটি ১৩-ফুট চওড়া ঢালু গলিতে। ভিড়ের চাপে ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে একপর্যায়ে পদপিষ্ট হয়ে ও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বিপূল সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়ল সিউলের ইয়োংসান ডিস্ট্রিক্টকে বিশেষ দুর্গত এলাকা ঘোষণা করেছেন।