কাতার বিশ্বকাপ: এই ডেনমার্ক ভয়ঙ্কর

ইউরোপ মহাদেশের মাঝারিশক্তির দলগুলোর মধ্যে অন্যতম ডেনমার্ক। হয়তো শিরোপা দৌড়ে কেউ তাদের এগিয়ে রাখছে না। তবে অন্যদের স্বপ্নযাত্রা যে ডেনিশরা থামিয়ে দিতে পারে এ নিয়ে সংশয় আছে খুব লোকেরই। গত বছর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে চমক উপহার দেওয়া ডেনমার্ক এবারের বিশ্বকাপে জায়ান্ট কিলার তকমা নিয়েই মিশন শুরু করতে যাচ্ছে।

কাতার বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে ডেনমার্ক

বিশ্বমঞ্চে ডেনিশদের সেরা সময় কেটেছে ১৯৯৮ সালে। ফ্রান্সের ওই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে তারা। গত আসরের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেয় ডেনমার্ক। এবারের আসরে নক আউট পর্বে যাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখা হচ্ছে তাদের। কারণ গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিধর ফ্রান্সকে শেষ দুই ম্যাচেই হারিয়েছে তারা।

গ্রুপের অন্য দুই দল তিউনিসিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকেও সহজে হারিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে ডেনমার্ক। নক আউট তো বটেই কাতারের মহাযজ্ঞে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে চায় তারা। ডেনিশরা স্বপ্ন দেখছে শিরোপার। যদিও বাস্তবতা বড্ড কঠিন।

তারকা: ডেনমার্ক দলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। গত বছর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে তাকে নিয়ে অনেক আশা ছিল ডেনমার্কের। কিন্তু প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠেই হার্ট অ্যাটাক করেন এই ফরওয়ার্ড। তাকে হারানোর শোকটাকে শক্তিতে রূপান্তর করে ইউরোর সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল ডেনিশরা। এরিকসেন সুস্থ হয়ে হয়ে উঠেছেন। দুঃস্বপ্নের কয়েক মাস কাটিয়ে ফিরে এসেছেন মাঠে।

এবারের বিশ্বকাপে তার দিকেই তাকিয়ে থাকবে ডেনমার্ক। ২০১০ সালে ডেনিশদের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। এ পর্যন্ত ডেনমার্কের হয়ে ১১৭ ম্যাচে ৩৯টি গোল করেছেন তিনি। দলটিকে আরও একজন বড় তারকা আছেন। তিনি সিমন কেজায়ের। রক্ষণ সামলাবার পাশাপাশি আক্রমণেও পটু এই তারকা। ২০০৯ সালে অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১২১টি ম্যাচ খেলেছেন কেজায়ের। দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় তিনিই। তার নেতৃত্বেই কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেবে ডেনমার্ক।

প্রধান কোচ: ২০২০ ইউরো করোনাভাইরাসের কারণে পেছানো হয়। এ সময় অ্যাজ হারিড সরে দাঁড়ান। তখনই ক্যাসপার জুলমান্ডকে নিয়োগ দেওয়া হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু চমক উপহার দিয়েছেন তিনি। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে সবশেষ ইউরোতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল ডেনমার্ক।

সেই টুর্নামেন্টের শুরুতে প্রাণভোমরা এরিকসেনকে হারানোর পরও আশা ছাড়েননি জুলমান্ড। লড়াই করেছেন শেষ পর্যন্ত। এবার বিশ্বকাপেও চমক দেখা চান তিনি। তার অধীনে দুই বছর ধরে দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে ডেনমার্ক। ছন্দটা কাতার বিশ্বকাপেও ধরে রাখতে চান জুলমান্ড।

কিংবদন্তি: ডেনমার্ক ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার ভাবা হয় পিটার স্মাইকেল। ডেনিশদের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশিবার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালে অভিষেক এবং ২০০১ সালে অবসর গ্রহণ করেন পিটার। এ সময়ে ১২৯টি ম্যাচ খেলেছেন এই গোলরক্ষক। লম্বা সময় ডেনমার্ককে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি গোলবারও আগলে রেখেছিলেন দারুণভাবে।

গোলরক্ষক হলেও একটি গোল করার উদহারণ আছে তার। পিটার অবসর নিয়েছেন; কিন্তু তার যোগ্য উত্তরসূরি ঠিকই চলে এসেছেন ডেনমার্ক দলে। ডেনিশদের বর্তমান গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মাইকেল তারই পুত্র! দলের সহ-অধিনায়ক তিনি। ক্যাসপার যেন যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান। ডেনিশ এই গোলরক্ষক অনেক ফরওয়ার্ডের জন্য হতাশার এক নাম।

ডেনমার্ক:

গ্রুপ ‘ডি’: ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, তিউনিসিয়া

ফিফা র‌্যাঙ্কিং: ১০

বিশ্বকাপ রেকর্ড:

১৯২০-৫৪: অংশ নেয়নি
১৯৫৮: বাছাই
১৯৬২: অংশ নেয়নি
১৯৬৬-৮২: বাছাই
১৯৮৬: শেষ ১৬

১৯৯০-৯৪: বাছাই
১৯৯৮: কোয়ার্টার ফাইনাল
২০০২: শেষ ১৬
২০০৬: বাছাই
২০১০: গ্রুপপর্ব

২০১৪: বাছাই
২০১৮: শেষ ১৬

গ্রুপপর্বের সূচি:

২২ নভেম্বর: ডেনমার্ক-তিউনিসিয়া, সন্ধ্যা ৭টা
২৬ নভেম্বর: ফ্রান্স-ডেনমার্ক, রাত ১০টা
৩০ নভেম্বর: অস্ট্রেলিয়া-ডেনমার্ক, রাত ৯টা