১৫০ টাকার বই কেনা হলো ৫ হাজার টাকায়!

কথা ছিল মূল বই কেনার, কিন্তু তা না করে ছাপাখানা থেকে গোপনে কেনা হয়েছে বইয়ের ফটোকপি। সেই ফটোকপির দাম পরিশোধ দেখানো হয়েছে মূল বইয়ের দামের কয়েকগুন বেশি। ১০ লাখ টাকার বইয়ের কেনাকাটায় এমন জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কয়েকজন অধ্যাপক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

জানা গেছে, ভারতের এস চাঁদ প্রকাশনীর ড. আর ডি মদনের লেখা ‘মডার্ন ইনোগ্রানিক কেমিস্ট্রি’ মূল বইয়ের দাম ১২৮০ রুপি। বাংলাদেশে বইটি কিনতে লাগে ২০০০ টাকার কিছু বেশি।

রাজশাহীর সোনাদীঘি মোড়ের সবুজ লাইব্রেরির মালিক আবু মুসা বলছেন, আমাদের এখানে বইটির ফটোকপি পাওয়া যায়। দাম ১৫০ টাকা।

কিন্তু রুয়েট কর্তৃপক্ষ বইটির ফটোকপি কিনেছে ৫১৮০ টাকায়। এ বইয়ের দুটি কপি তারা কিনেছে, খরচ দেখিয়েছে ১০ হাজার ৩৬০ টাকা।

আমাদের সময়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম শেখের কাছে প্রয়োজনীয় কিছু বই কেনার জন্য আবেদন করেন ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান মাহবুবুল আলম। আবেদনে বই কেনার বাজেট দেন প্রায় তিন লাখ টাকার। স্ট্যান্ডার্ড রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন-এসআরএফকিউ’র মাধ্যমে বইয়ের মূল কপি গুলো কেনা হবে বলে জানানো হয়।

পরে রংপুরের কমটেক কম্পিউটার অ্যান্ড প্রিন্টার্স-২ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইটিই, আইপিই, জিসিই, ইউআরপি এবং এমটিই বিভাগের বই সরবরাহের অর্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি মূল বই সরবরাহ না করে, দিয়েছে ফটোকপি।

জানা গেছে, কমটেক কম্পিউটার অ্যান্ড প্রিন্টার্স-২ নামে প্রতিষ্ঠানটি কোনো লাইব্রেরি নয়। এটা একটা ছাপাখানা।

রুয়েটের কয়েকজন অধ্যাপক ও প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তার যোগসাজশে ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান মাহবুবুল আলম এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় দুই লাখ টাকার বই কেনার অনুমোদন দেন উপাচার্য। বইগুলো কিনতে অর্ডার দেওয়া হয় রংপুরের আরেকটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠান হাইটেক ডিজিটাল সাইনকে। তারা এমএসই, ম্যাথমেটিকস, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ইকোনমিকস বিভাগের বই সরবরাহ করেছে। তখনও মূল বইয়ের পরিবর্তে ফটোকপি দেওয়া হয়। তবে দাম পরিশোধ দেখানো হয় মূল বইয়ের কয়েকগুণ বেশি।

এভাবে প্রতিষ্ঠান দুটির কাছ থেকে চার লটে ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৭ টাকা বই কেনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রুয়েটের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘বইগুলো কেনার সময়ই আমি বলেছিলাম মূল বই কিনতে হবে ফটোকপি বই কেনা যাবে না। কিন্তু তারা আমাকে না জানিয়ে বইগুলো কিনে লাইব্রেরিতে ঢুকিয়েছে। বইগুলো হাত দিয়ে ধরলেই বুঝা যায় এগুলো ফটোকপি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় এমন দুর্নীতি-অনিয়ম মানা যায় না।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের মূল বই দেওয়ার কথা ছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু তারা ফটোকপি বই দিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে কিছু বই পরিবর্তনও করা হয়েছিল। তবে কিছু ফটেচাকপি বই এখনো থেকে যেতে পারে।

বই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কমটেক কম্পিউটার অ্যান্ড প্রিন্টার্স-২ এর মালিক একেএম খুরশীদ আলম বলেন, আমাদেরতো লাইব্রেরি নেই। এটা ছাপাখানা। কেউ বই চাইলে আমরা অন্য পার্টির কাছ থেকে এনে তাদের দিই। রুয়েটেও সেভাবেই বই সরবরাহ করেছি।

তবে বই কেনায় কোনো দুর্নীতি বা জালিয়াতি হয়েছে কিনা জানা নেই বলে জানিয়েছে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।