বিপর্যস্ত ভারত, মহানাটকীয় জয় বাংলাদেশের

লক্ষ্যটা নাগালেই ছিল। কিন্তু ‘সহজ’ রান তাড়া করতে নেমে ১৩৬ রানের মধ্যে নয় উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। জয় তখন দূরের বাতিঘর। সেখান থেকে মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এই প্রথম ভারতের বিপক্ষে স্নায়ুচাপ ধরে রেখে জিতল বাংলাদেশ (১৯০/৯)।

মেহেদি হাসান মিরাজের আরেকটি দুর্দান্ত শট

আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ভারতের বিরুদ্ধে এক উইকেটের থ্রিলার জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের ৫২ বল বাকি থাকতে ভারতকে ১৮৬ রানে গুঁড়িয়ে দেয় টাইগাররা। জবাবে ২৪ বল বাকি থাকতে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেয় লিটন দাসের দল।

এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আগামী বুধবার একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। সিরিজে এগিয়ে যেতে বল হাতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও পেসার ইবাদত হোসেন। ভারতের নয় উইকেট নিয়েছেন এই দুজনই। যেখানে সাকিবের শিকার পাঁচটি। চারটি ইবাদতের।

এই যুগলের সামনে ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে প্রতিরোধ গড়তে পেরেছেন কেবল লোকেশ রাহুল। এক প্রান্ত আগলে রেখে ৭০ বলে ৭৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন তিনি। এ ছাড়া অধিনায়ক রোহিম শর্মা ৩১ বলে ২৭, শ্রেয়াস আইয়ার ৩৯ বলে ২৪ এবং ওয়াসিংটন সুন্দর ৪৩ বলে ১৯ রানে সাজঘরে ফেরেন। ভারত ছাড়ায় পৌনে দুশোর গণ্ডি।

চোট নিয়ে এই ম্যাচ থেকে আগেই ছিটকে গেছেন নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার অনুপস্থিতিতে নেতেৃত্বের জোয়াল পড়ে লিটন দাসের কাঁধে। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচে ভাগ্যও নিজের অনুকূলে পেয়েছেন তিনি। টস জিতে সতীর্থদের হাতে বল তুলে দেন লিটন। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন সাকিব।

৪৯ রানের মধ্যে ভারতের তিন উইকেটের দুটিই তুলে নেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। অন্যটি নেন মিরাজ। শ্রেয়াস ও ওয়াসিংটনকে নিয়ে রাহুল টেনে ধরেন উইকেটের লাগাম। গড়েন কার্যকর দুটি জুটি। শ্রেয়াসের সঙ্গে ৪৩ এবং ওয়াসিংটনকে নিয়ে ৬০ রানের জুটি গড়েন। প্রথম জুটি ভাঙেন সাকিব; পরেরটা ইবাদত। দুজন পাল্লা দিয়ে উইকেট নিতে থাকেন। ধসে পড়ে ভারতের গভীর ব্যাটিং লাইন।

‘সহজ’ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দলীয় ২৬ রানে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন এনামুল হক বিজয়। তিনি করেন ১৪ রান। এরপর তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়েন সাকিব ও লিটন। ৪৮ রানে এই জুটি বিচ্ছিন্ন হতেই পথ হারায় বাংলাদেশ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে টাইগারদের ইনিংস।

নিয়মিত বিরতি দিয়ে একে একে সাজঘরে ফিরলেন লিটন, সাকিব, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লিটন ৬৩ বলে ৪১, সাকিব ৩৮ বলে ২৯, মুশফিক ৪৫ বলে ১৮ এবং মাহমুদউল্লাহ ৩৫ বলে ১৪ রানে ফেরেন। দেড় শ’র আগে গুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। প্রায় ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে অলৌকিক এক জুটি গড়েন মিরাজ ও মোস্তাফিজ।

৫৪ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়েন এই দুজন। মিরাজ ৩৯ বলে ৩৮ রানে অজেয় থাকেন। ১১ বলে ১০ রানে অপরাজিত মোস্তাফিজ। ম্যাচ শেষে এই দুজন হয়ে গেলেন উদযাপনের মধ্যমণি। যদিও জয়ের ভিতটা সাকিব এবং ইবাদতই গড়ে দিয়েছেন। কিন্তু নিশ্চিত হার থেকে যখন মহানাটকীয় জয় চলে আসে তখন আসলে পার্শ্বনায়কেরাই চলে আসেন লাইম লাইটে।