১৮ বছর পর রোনালদো

পর্তুগাল খেলবেন এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো শুরুর একাদশে থাকবেন এটাই যেন চিরায়িত নিয়ম। অবশেষে প্রথা ভাঙলেন ফার্নান্দো সান্তোস। প্রিয় শিষ্যকে বেঞ্চে বসিয়ে দিলেন তিনি! সবশেষ এমন দৃশ্য দেখা গেছে ২০০৪ সালে, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে পর্তুগাল-রাশিয়া ম্যাচে।

ডাগ আউটে সতীর্থদের উদযাপনের সময় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

দিনের হিসেবটা করলে গুণে হয়তো শেষ করা যাবে না। তবে সালের হিসেবে সময়টা দেড় যুগেরও বেশি! এর মাঝে অবশ্য পর্তুগালের ম্যাচে রোনালদোকে বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু সেটা ছিল অগুরুত্বপূর্ণ কোনো ম্যাচে। দীর্ঘ ১৮ বছর পর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শুরুর একাদশে না থাকার ঘটনা এবারই প্রথম।

মঙ্গলবার রাতে কাতার বিশ্বকাপে পর্তুগাল-সুইজাল্যান্ড শেষ ষোলোর ম্যাচে সেই দিনটা ফিরে এলো। রোনালদোকে বেঞ্চে রেখে শুরুর একাদশে পর্তুগাল কোচ সান্টোস মাঠে নামান গনসালো রামোসকে। সুইসদের বিপক্ষে এই ম্যাচটা আবার ছিল তার বিশ্বকাপ অভিষেকের দিন!

বড় মঞ্চে সুযোগ পেয়ে গুরুর আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন রামোস। সুইসদের বিপক্ষে করলেন দারুণ এক হ্যাটট্রিক। এবারের বিশ্বকাপে পর্তুগাল তো বটেই, কোনো দেশের ফুটবলারের এটাই প্রথম হ্যাটট্রিক। ৭৩ মিনিটে তাকে মাঠ থেকে তুলে রোনালদোকে নামান পর্তুগাল কোচ।

এই মৌসুমে এমন অভিজ্ঞতা অবশ্য কয়েকবারই হয়েছে রোনালদোর। সেটি অবশ্য ক্লাব ফুটবলে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে থাকাকালীন। ক্লাবের সেই দুঃস্বপ্ন এবার আন্তর্জাতিক ফুটবলেও ফিরল। মাঠে ফিরে অবশ্য রোনালদো একটা গোল করেছিলেন, যদিও তার শট নেওয়ার আগেই বেজে ওঠে অফসাইডের বাঁশি।

এরপরও অবশ্য দুবার গোলের সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেছেন রোনালদোকে। তাকে বেঞ্চে বসিয়ে কেন রামোসকে শুরুর একাদশে রেখেছেন সান্টোস সেটা বুঝতে আর ফুটবল দার্শনিক হতে হচ্ছে না। তবু আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। নক আউট পর্বের ম্যাচে রোনালদো শুরুর একাদশে থাকতে পারবেন তো?

খোদ পর্তুগিজরাই তো রোনালদোকে শুরুর একাদশে রাখার পক্ষে ছিলেন না। সম্প্রতি দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম জরিপ করে, রোনালদোকে শুরুর একাদশে রাখা যায় কিনা তা নিয়ে। সেখানে ৭০ শতাংশ পর্তুগিজ চেয়েছেন রোনালদো একাদশের বাইরে থাকুক। তাদের চাওয়াটাই যেন পূরণ হলো।

ক্লাব ফুটবলে প্রায় বিপর্যয় নেমে আসার পরও রোনালদোকে বিশ্বকাপের শুরু থেকেই একাদশে রেখেছেন সান্টোস। কিন্তু গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচ খেলেও চেনারূপে ফিরতে পারেননি পর্তুগিজ যুবরাজ। পেনাল্টি থেকে অবশ্য একটা গোল করেছিলেন, সেই গোল নিয়ে আবার কত বিতর্ক!

রোনালদোকে একাদশের বাইরে রাখার একটা ইঙ্গিত অবশ্য গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচেই দিয়ে রেখেছিলেন সান্টোস। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হারা ম্যাচের ৬৫ মিনিটে রোনালদোকে মাঠ থেকে তুলে নেন পর্তুগিজ কোচ। কোচের এই সিদ্ধান্তে নাকি বাজে প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন রোনালদো!

তাহলে সেটাই কি কাল হয়ে দাঁড়াল? চটে গিয়েই কি আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ম্যাচের শুরুতে বেঞ্চে বসিয়ে দিলেন সান্টোস!