রোনালদোদের কাঁদিয়ে নতুন ইতিহাস মরক্কোর

মরক্কোর রাত। আফ্রিকার রাত। ইতিহাস গড়ার রাত। বলছিলেন ফুটবলের কবি, ধারাভাষ্যের কবি পিটার ড্রুরি। কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় চমক মরক্কোকে আটকাতে পারল না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালও। বরং কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলো ইউরোর প্রাক্তন চ্যাম্পিয়নরা।

মরক্কোর ইতিহাস গড়ার আনন্দ। পেছনে পর্তুগালের হতাশার ছবি

আজ শনিবার শেষ আটের সপ্তম ম্যাচে পর্তুগিজদের ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে মরক্কো। তাতেই হলো বিরাট এক ইতিহাস। প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চের সেমিফাইনালে ওঠার গৌরব অর্জন করল মরক্কানরা। শুধু তাই নয়, প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে শেষ আটের গণ্ডি পাড়ি দিল তারা।

এর আগে নাটকীয় টাইব্রেকে স্পেনকে হারিয়ে আফ্রিকার চতুর্থ দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল মরক্কো। শেষ আটের ম্যাচে তাদের জন্য বড় বাধা ছিল ইতিহাস। কারণ আফ্রিকান আগের তিন দল ঘানা, ক্যামেরুন ও সেনেগাল বিদায় নিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই।

অবশেষে আফ্রিকানদের বৃত্ত ভাঙলেন হাকিমি-জিয়াচ-বুনুরা। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে এই সাফল্যের জন্য তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মহান আল্লাহর কাছে। গোটা দল সিজদাহ দিয়ে দেশের ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্য উদযাপন করে। মাঠের অন্য ছবিটা হতাশার। রোনালদো ও পর্তুগালের স্বপ্নভঙ্গের বেদনার।

চোখের জল নিয়ে মাঠ ছেড়ে গেছেন রোনালদো। টানা পাঁচ বিশ্বকাপ খেলেও শিরোপা জেতা হলো এই শতাব্দীর অন্যতম সেরা ফুটবলারের। ফুটবল দায় মেটাতে পারেনি ‘সিআর সেভেনে’র। এই আক্ষেপ নিয়েই কাতার ছেড়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে রোনালদোকে। এ যাত্রায় তার সঙ্গী হিসেবে আছেন দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সতীর্থ পেপেও।

ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছে মরক্কো। পর্তুগালের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করে দিয়েছে তারা। খেলার ধারার বিপরীতে ৪২ মিনিটে লিডও পেয়ে যায় মরক্কানরা। আফ্রিকানদের লিড এনে দিয়ে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান এন-নেসরি। এই গোলটার আর শোধ দিতে পারেনি পর্তুগাল।

বরং তাদের আক্রমণভাগের অগ্নিপরীক্ষা নিয়ে ছাড়ল মরক্কো। দ্বিতীয়ার্ধে রোনালদো মাঠে নেমেছেন বটে, কিন্তু পর্তুগিজদের স্বপ্নবাঁচাতে পারেননি। ম্যাচের শেষ দিকে সম্ভাব্য সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে তার শট রুখে দেন মরক্কান গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু।

কেবল রোনালদোই নন, ফার্নান্দেজ-রামোসদের ম্যাচজুড়ে হতাশ করেছেন কানাডায় জন্ম নেওয়া মরক্কোন গোলরক্ষক। সেই দেয়াল আল ভাঙতে পারেনি ইউরোপিয়ান্টরা। পর্তুগাল কোচ, এবারের বিশ্বকাপে কোনো দলের ফুটবলারই মরক্কোর জালে বল জড়াতে পারেননি।

ম্যাচের শেষ দিকে পর্তুগালের জন্য সুযোগ হয়ে আসে সমতায় ফেরার। পেপের হেড থাকল না লক্ষ্যে। ফার্নান্দেজের শট প্রতিহত করে দেন বুনু। মরক্কো যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল তখনই ঘটে গেল এককাণ্ড। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ওয়ালিদ ইদ্রিসা।

ম্যাচের বাকি ছিল কেবল পাঁচ মিনিট। এ সময়ে রক্ষণে আরও জমাটবাঁধে আফ্রিকান জায়ান্টরা। সেই দেয়াল আর ভাঙতে পারেনি পর্তুগাল। উৎসবে মেতে ওঠে মরক্কো। এই উৎসবে তাদের সঙ্গে শামিল হতো পারে গোটা আফ্রিকা মহাদেশ। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কিংবা মুসলিম দেশগুলোও।

এই প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল আফ্রিকান কিংবা কোনো মুসলিম দেশ। স্বপ্নপূরণের খুব কাছাকাছি চলে আসা মরক্কোকে সেমিফাইনালে দিতে হবে আরও বড় পরীক্ষা। আগামী বুধবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স কিংবা ইংল্যান্ড।

অবশ্য মরক্কো যেভাবে খেলছে তাতে তাদের পক্ষে ফাইনালে ওঠাও অসম্ভব নয়। এই ধাপে আসতে যে কয়েকটি ইউরোপিয়ান ‘বড়’ দলকে হারিয়েছে তারা। পর্তুগাল ও স্পেনের আগে সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়ামকে বিদায় করেছে মরক্কানরা। তাদের স্বপ্নযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আরেক ইউরোপিয়ান দল। সেটিও উপড়ে ফেলার স্বপ্ন এখন তারা দেখতেই পারে।