আপনি পড়ছেন

নয় মাস ধরে চলা যুদ্ধ আর হানাদার বাহিনীর পোড়ামাটি নীতির ফলে কল-কারখানা, বন্দর-সড়ক অবকাঠামো প্রায় সবই ধ্বংস হওয়ায় এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে ভৌত সম্পদ বা ম্যাটেরিয়াল অ্যাসেট বলতে তেমন কিছু অবশিষ্ট ছিল না। তবে অভৌত সম্পদের কমতি ছিল না বাংলাদেশের। ব্রিটিশ শোষণ, পাকিস্তানি লুন্ঠন-নিপীড়নের অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে বাংলায় যে প্রত্যয়ী, মেধাবী, স্বপ্নবাজ মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিকশিত হয়েছিল, তার সোনালি প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ছিলেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে, গণমাধ্যমে, শিল্পকলায়, চিন্তার চর্চায়। তাদের বৃদ্ধিবৃত্তিক ঋদ্ধিতে ভর করেই ঘুরে দাঁড়াতে পারত নবীন বাংলাদেশ। বিষয়টি বুঝতে পেরেই পাকিস্তানিরা এই দেশকে চিরতরে পঙ্গু করতে হত্যা করেছিল বাংলার সূর্যসন্তানদের। বুদ্ধিজীবীদের হারিয়ে এখনও ধুঁকছে স্বদেশ।

martyred intellectual dayশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক, গবেষক, স্থপতি, প্রকৌশলী, ভাস্কর, চিত্রশিল্পী, সংস্কৃতিসেবী, দার্শনিক, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানীরাই একটি জাতিকে পথ-নির্দেশনা দেন, স্বপ্ন দেখান। তাদের মেধায় ভর করে এগিয়ে যায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও প্রয়োগ, শক্তিশালী হয় দেশের সমাজ-অর্থনীতি। দৈনন্দিনতায় ব্যস্ত সাধারণ মানুষের সামনে এরাই ভবিষ্যতের রূপকল্প উপস্থাপন করেন। এরাই একটি দেশের বুদ্ধিজীবী।

বুদ্ধিজীবীদের অনুপস্থিতিতে জাতির বৃদ্ধিবৃত্তিক চর্চা থমকে যায়, দেশ হয়ে পড়ে মেধা শূন্য, পঙ্গু। একাত্তরে বাঙালির বিজয় অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে হানাদার পাকিস্তানিরা তাই বাংলাদেশকে পঙ্গু বানানোর লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করে। সেই টার্গেটে হয়তো তারা অনেকটাই সফল

একাত্তরের পর বাংলাদেশে মেধাবী, মননশীল অসংখ্য মানুষের জন্ম হয়েছে ঠিকই। তবে একাত্তর-পূর্ব কালের মনন আর চিন্তার চর্চার সঙ্গে তাদের পূর্ণাঙ্গ সংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি শহীদ বৃদ্ধিজীবী বলে আমরা যাদের চিনি সেই সেতুবন্ধের অনুপস্থিতির কারণে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে পুরো যুদ্ধকালীন সময়জুড়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। তবে স্বাধীনতার আগ মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর এই হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। এদেশের ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের এ কাজে সাহায্য করেছিল স্থানীয় দোসররা।

পরে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এই দিনকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ঘোষণা করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির অংশ হিসেবে ২০২০ সালে প্রাথমিকভাবে দুই হাজার ২২২ জনের নাম নিবন্ধন করে সরকার।

১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ অসংখ্য খ্যাতিমান মেধাবী মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। সেই দিনের হত্যাকাণ্ডের পর শত শত লাশ পাওয়া গেছে বিভিন্ন জায়গায়। পরে সেগুলো বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। এর মধ্যে রাজধানীর মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকা অন্যতম।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির সূর্যসন্তানের স্মরণে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার সাথে সাথে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর ছিনিয়ে আনে বিজয়। কিন্তু জাতি হারিয়েছে অগুনতি সূর্যসন্তানদের। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাদের মেধা ও প্রজ্ঞার প্রয়োগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি এবং যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে বুদ্ধিবৃত্তিক পরামর্শ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক দেশ গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।

এ উপলক্ষে পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছে। বিচার চলমান রয়েছে, অনেকগুলো বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। এসব রায় কার্যকরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। যারা মানবতাবিরোধীদের এদেশে সঙ্গ দিয়েছে, তাদের বিচারও একদিন হবে।

শহীদ দিবস উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।

রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এরপর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। পরে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা।

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ পুষ্পস্তবক অর্পণে সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিএনপিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। 

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের নেতাকর্মীরা সকাল ৭টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে, সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন।

শহীদ দিবস উপলক্ষে বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.