আর্জেন্টিনার পেনাল্টি নিয়ে তুমুল বিতর্ক

কোয়ার্টার ফাইনালে হট ফেভারিট ব্রাজিলের সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে ক্রোয়েশিয়া। ভাগ্যক্রমে সেলেকাওদের কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেছে ইউরোপিয়ান জায়ান্টরা। অথচ ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আর্জেন্টিনার সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না লুকা মডরিচ অ্যান্ড কোং। তাদের বিদায় করে কাতার বিশ্বকাপের শেষ মঞ্চে চলে গেল দুইবারের বিশ্বসেরারা।

ইতালিয়ান রেফারি ড্যানিয়েল ওরসাতো

মঙ্গলবার রাতে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসিদের কাছে ৩-০ গোলে হেরে গেছে গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা। অথচ ম্যাচের প্রথম আধ ঘণ্টা দুর্দান্ত খেলছিল ক্রোয়াটরা। এর কয়েক মিনিট পরই পাল্টে গেল ম্যাচের ছবি। খেলার ধারার বিপরীতে পেনাল্টি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান অধিনায়ক মেসি।

বিরতির বাঁশির কয়েক মিনিট আগে আরও একটি গোল হজম করে ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে তাদের ফেরার ক্ষীণ সম্ভাবনাটাও শেষ করে দেন জুলিয়ান আলভারেজ। ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড করেন ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল। প্রথম সেমিফাইনালটা শেষ হয়ে গেছে ওখানেই। কিন্তু তৃতীয় গোল নয়, ক্রোয়াটরা ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে প্রথম গোল হজমের পরপরই।

কারণ আর্জেন্টিনা লিড নেওয়ার পর মনোবল ভেঙে যায় ক্রোয়েশিয়ার। সেই গোল শোধের জন্য মরিয়া হওয়া দলটি হজম করে আরও একটি গোল। এরপর আরও একটি। কিন্তু ম্যাচ চলাকালীনই বিতর্ক শুরু গেছে মেসির গোল নিয়ে। সেমিফাইনালের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রেফারির পেনাল্টি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। ইতালিয়ান রেফারি ড্যানিয়েল ওরসাতোর মুণ্ডপাত চলছে।

এই বিতর্কে যোগ দিয়েছেন ফুটবলের অনেক রথী-মহারথী। তাদের দাবি, রেফারির পেনাল্টি সিদ্ধান্তটা ক্রোয়েশিয়ার জন্য অন্যায্য হয়ে গেছে। পাল্টা আক্রমণে বল নিয়ে এগিয়ে আসেন আলভারেজ। কিন্তু ডি-বক্সের সামনে এসে ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচের বাধার মুখে পড়েন তিনি। মাটিতে পড়ে ডান আলভারেজ। ফাউল দেওয়া হয় ক্রোয়াট শেষ প্রহরীকে।

এমনকি একটি হলুদ কার্ডও দেওয়া হয়েছে লিভাকোভিচকে। রেফারির কাছে মনে হয়েছে আর্জেন্টাইন তরুণকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ফুটবল বিশ্লেষকদের বড় একটা অংশ বলছেন অন্যকথা। বিখ্যাত ফুটবল বিশ্লেষক গ্যারি নেভিল, রয় কিন এবং ইয়ান রাইটদের মতে রেফারি তার সিদ্ধান্তে ভুল করেছেন। তারা বিস্ময় প্রকাশ করেন, কেন ভিএআর দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো না।

আইটিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার নেভিল বলেছেন, ‘এটা পেনাল্টি নয়। কোনোভাবেই পেনাল্টি হয় না। কিপার (লিভাকোভিচ) চলে এসেছেন এবং নিজেকে থামিয়ে নিয়েছেন। (আলভারেজের) শটও নেওয়া হয়ে গেছে। এরপর দৌড়াতে গিয়ে কিপারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে গেছেন। তার অর্থ কী দাঁড়ায়? কোনোভাবেই এটা পেনাল্টি হয় না।’

রেফারির সিদ্ধান্তকে ভুল বলে আখ্যা দিয়েছেন আরেক ধারভাষ্যকার ও ফুটবল পন্ডিত রাইট। রেফারির সিদ্ধান্ত বিস্মিত করেছে তাকে। রাইটের ভাষায়, ‘রেফারি ভালোভাবে বিষয়টি দেখেইনি। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না (কেন পেনাল্টি দেওয়া হলো)।’ নেভিল-রাইটের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন আইরিশ কিংবদন্তি কিন। তিনি বলেছেন, ‘আমিও তাদের সঙ্গে একমত। আমারও মনে হয়নি এটা পেনাল্টি ছিল।’

আলভারেজকে ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক ব্লক করেছেন বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। তাদের উদ্দেশ্যে কিনের প্রশ্ন, ‘তাহলে তার (লিভাকোভিচ) কোথায় যাওয়া দরকার ছিল? গোলপোস্ট ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল?’ এই ত্রয়ীর সঙ্গে অবশ্য একমত হতে পারছেন না আরেক ধারভাষ্যকার অ্যালি ম্যাককইস্ট। তার দাবি, ‘আমি জানি না তারা কেন বলছে এটা পেনাল্টি না। আমার মনে হয় রেফারি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।’

ক্রোয়েশিয়া কোচ জ্লাটকো দালিচ তো ম্যাচ শেষে ধুয়ে দিয়েছেন ইতালিয়ান রেফারিকে। তিনি বলেছেন, ‘প্রথমার্ধের আধ ঘণ্টা আমরা খুব ভালো খেলছিলাম। আমরা গোল হজম করলাম রেফারির সন্দেহের কারণে। ম্যাচে আমাদেরকে কর্নার দেওয়া হয়নি। বরং একটু পর পেনাল্টি দেওয়া হলো। সত্যি বলতে এটা অনেক সস্তা ও সহজ সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। এরপর গোলটা পরিশোধ করতে গিয়ে আমরা প্রতি আক্রমণে দ্বিতীয়টা হজম করলাম। যা আমাদের মনোবল ভেঙে দেয়। অথচ পেনাল্টির আগ পর্যন্ত পুরো ম্যাচটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।’

কাতার বিশ্বকাপে এটাই অবশ্য প্রথম পেনাল্টি নয় আর্জেন্টিনার। এবারের আসরে সর্বমোট চারটি পেনাল্টি পেয়েছে তারা। এই বিশ্বকাপেই ল্যাটিন আমেরিকান জায়ান্টদের আরও একটি পেনাল্টি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। এবার নতুন রূপে এলো পুরোনো বিতর্ক। যাহোক, চারটি পেনাল্টিই নিয়েছেন মেসি। যার তিনটিতেই গোল করেছেন তিনি।

কেবল ফুটবলবোদ্ধারাই নন, বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে ঝড় উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়া দ্বিখন্ডিত হয়ে গেছে পেনাল্টি ইস্যু নিয়ে। ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বেশির ভাগ সংবাদ মাধ্যম ও ধারাভাষ্যকাররা পেনাল্টি সিদ্ধান্তটিকে ভুল বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিতর্ক আরও উসকে দিচ্ছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রেফারি কেন ভিএআরের সহায়তা নেননি। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অবশ্য ক্রোয়াট গোলরক্ষকসহ দুজন দেখেছেন হলুদ কার্ড।