কান্নার পুনরাবৃত্তি নাকি ষোলকলা পূরণ

২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করে চতুর্থবারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে জার্মানি, এটা হয়তো একটা লাইন হতে পারে। তবে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কাছে এটা দুঃখগাঁথার, বিষাদসময়, অনেক যন্ত্রণার এবং না পাওয়ার আক্ষেপ। সে আক্ষেপে হয়তো এখনও পুড়েন ল্যাটিন আমেরিকা জায়ান্টদের সমর্থকরা। ফাইনালে হারার পর আদৌ এর ব্যতিক্রম কিছু করার উপায় আছে কি! মোটেও না।

আরও একটি ফাইনালের অপেক্ষায় এলএমটেন

আর্জেন্টিনা দলে একজন মেসি ছিলেন বলে সে আক্ষেপ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ক্যারিয়ার যার অংসখ্য অর্জন, পায়ে লুটোপুটি খেয়েছে শত রেকর্ড। কত কিংবদন্তি নিজেকে মেসির কাছে মাথা নত করেছেন। তার আমলে জন্ম নিতে পেরে, তার দেখতে পেরে নিজেদের ভাগ্যমান মনে করেছেন কোটি ফুটবলপ্রেমী। এমনকি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকদের মুখেও পিএসজি তারকার স্মুতি শোনা যায় প্রায়ই। সেই মেসিকে ফিরে আসতে হয়েছে বিশ্বকাপের হাতটানা দূরত্ব থেকে।

সেবার ফাইনালে জার্মানির কাছে হারার পরের একটি ঘটনা সবার মনে সারাজীবন দাগ কেটে থাকবে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের ডাকে সাড়া দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন মেসি। যেতেই আড়চোখে তাকালেন শিরোপার দিকে। সেই মুহূর্তে তার চোখের কোণ বেয়ে জল বের হয়নি। আবেগ চেয়ে রেখেছিলেন। তবে ভেতরের কান্না কি ধরে রাখতে পেরেছিলেন? এই উত্তর তো সবারই জানার কথা।

গত বছর দেড়েক সময়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপের দুঃস্মৃতি ভোলার মতো অনেক উপকরণ পেয়েছেন মেসি। ক্লাব কিংবা জাতীয় দল, সব জায়গা থেকেই তার কাছে ধরা দিয়েছে বেশকিছু সাফল্য। তাতে কি সত্যিই সে আলোচিত বিশ্বকাপ না জেতার আক্ষেপ ভুলে গেছেন মেসি? এই প্রশ্নের জবাবে জবাবে আপনি না বলতেই পারেন। এর স্বপক্ষে বলার মতো স্বীকৃত এবং বহুল প্রতিষ্ঠিত একটা লাইনও যে আছে, ‘দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে’।

এই কথা হোক কিংবা ক্যারিয়ারের পূর্ণতা পেতে, মেসি অপেক্ষা ছিল আরেকটা সুযোগের। দাঁতে দাঁত চেপে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় বার্সেলোনার সাবেক অধিনায়ক হয়তো দিন গুনছিলেন, আবার যদি ভাগ্যবিধাতা একটু ফিরে তাকাতো। যদি বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার মতো একটা সুযোগ পেতাম।

মেসির সে কথা শুনেছে ভাগ্যবিধাতা। আরও একবার স্বপ্নের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে তার দল আর্জেন্টিনা। এবার লা আলবিসেলেস্তেদের প্রতিপক্ষ ইউরোপের শক্তিশালী দল ফ্রান্স। যারা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নের তকমা নিয়ে কাতারে মাটিতে পা রেখেছে। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে জায়গা নিয়েছে দিদিয়ের দেশমের দল।

টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো সব যোগ্যতাই আছে ফ্রান্সের। ইনজুরি জর্জরিত হওয়ার পর গত ছয় ম্যাচে নিজেদের গর্জন দেখিয়েছে ফরাসিরা। এবার শেষটায় ভালো করার মিশন দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের সামনে। তৃতীয় শিরোপার মিশনে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামবে ফ্রান্স। আসন্ন মাচটিতে কিলিয়ান এমবাপ্পে, অলিভার জিরার্ড, হুগো লরিসদের কল্যাণে ফরাসি সৌরভ ছড়ালে আরও একটি দুঃখগাঁথা লেখা হবে আর্জেন্টিনা তথা মেসিকে নিয়ে।

তবে ফ্রান্সকে রুখে দেওয়ার মতো সব সামর্থ্যই আছে আর্জেন্টিনার। সৌদি আরবের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা দলটি ঘুরে দাঁড়িয়ে একের পর এক নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আগামীকাল ফাইনালেও নিশ্চয়ই শেষ হাসি হাসতে চাইবেন মেসি। চাইবেন বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিয়ারের ষোলকলা পূরণ করতে। আর তা জানার জন্য আরও একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।