বিপর্যস্ত ভারত, জয়ের স্বপ্ন বাংলাদেশের

ধবলধোলাই ঠেকানোর টেস্টে ভারতকে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ১৪৪ রানের পুঁজি নিয়েই কোহলি-রাহুলদের দাঁত প্রায় লাগিয়ে দিচ্ছে টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ভারতকে চেপে ধরেছে স্বাগতিক শিবির। দুই ম্যাচের সিরিজে সমতায় ফিরতে ও অভাবনীয় জয়ের জন্য সাকিব আল হাসানদের দরকার আর ছয় উইকেট। ভারতের প্রয়োজন কাঁটায় কাঁটায় ১০০ রান।

মেহেদি হাসান মিরাজকে ঘিরে বাংলাদেশের উদযাপন 

আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে ২৩১ রানে। যা প্রথম ইনিংসের চেয়ে চার রান বেশি। আর প্রথম ইনিংসে স্কোর বোর্ডে ৩১৪ রান জমা করেছিল সফরকারী ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের শুরুতেই কোণঠাসা করে ফেলেছে টাইগাররা। চার উইকেটে ৪৫ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বিপর্যস্ত ভারত।

দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে শেষ বিকেলে মেহেদি হাসান মিরাজের বোলিং-জাদু। ৩৭ রানের মধ্যে ভারতের টপ অর্ডার প্রায় ধসিয়ে দিয়েছেন এই অফস্পিনার। যদিও সফরকারীদের বিপর্যয়ের শুরুটা হয়েছে সাকিবের হাত দিয়েই। অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে দুই রানে ফেরান বাঁহাতি অলরাউন্ডার। এরপর সাকিবের দেখানো মঞ্চে মিরাজের ঘূর্ণি-জাদু।

বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের ফাঁকে ঋষভ প্যান্ট ও বিরাট কোহলি

মিরাজ একে একে সাজঘরে পাঠান ওপেনার শুভমান গিল, চেতেশ্বর পুজারা ও বিরাট কোহলিকে। এই ত্রয়ীর একজনও যেতে পারেননি দুই অংকে। তবে উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেন অক্ষর প্যাটেল। বল হাতে বাংলাদেশকে ভোগানোর পর ব্যাট হাতেও অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছেন তিনি। ৫৪ বলে ২৬ রানে দিন শেষে অপরাজিত থাকলেন অক্ষর।

দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ দিনের খেলা অক্ষর শুরু করবেন জয়দেব উনাদকাটকে নিয়ে। যিনি টেস্ট অভিষেকের এক দশক পর উইকেট পেয়েছিলেন। শেষ বিকেলে উনাদকাট ২২ গজে এসে উইকেট পতনের মিছিল থামান। এবার নিশ্চয়ই ব্যাট হাতে ঢাকা টেস্টটা স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন তিনি। কিন্তু সেটা হতে দেবেন না বলে ইতোমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শেষ বিকেলের নায়ক মিরাজ।

এর আগে আজ সকালে বিনা উইকেটে সাত রানে দ্বিতীয় ইনিংস ও তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। টাইগারদের দিনের শুরুটা হয়েছে জোড়া ধাক্কা দিয়ে। বিদায় নেন মুমিনুল হক সৌরভ ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনই আউট হন সমান পাঁচ রানে। বেশি সময় টিকতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।

সাকিব ৩৬ বলে ১৩ এবং মুশফিক ১৯ বলে ৯ রানে ফেরেন। এক প্রান্ত আগলে রাখা ওপেনার জাকির হাসান আউট হন দলীয় শতক ছাড়ানোর পর। ১৩৫ বলে ৫১ রানে বিদায় নেন তিনি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে এটা তার প্রথম হাফসেঞ্চুরি। এর আগে চট্টগ্রামে অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন জাকির।

জাকিরের বিদায়ের পর লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই শুরু করেন লিটন দাস। নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদকে নিয়ে কার্যকর দুটি জুটি গড়েন তিনি। দলীয় সংগ্রহ দুশো ছাড়ায় বাংলাদেশ। সোহান এবং তাসকিন দুজনই সমান ৩১ রানে আউট হয়েছেন। নুরুল খরচ করেছেন ২৯ বল এবং ৪৬ বল খেলেছেন তাসকিন।

প্রায় ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করেছেন লিটনও। ৯৮ বলে ৭৩ রানে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার। ভারতের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল অক্ষর প্যাটেল নিয়েছেন তিন উইকেট। দুটি করে শিকার মোহাম্মদ সিরাজ ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। খালি হাতে ফেরেননি উমেশ যাদব, জয়দেব উনাদকাটও।

ব্যাটাররা পারেননি দলকে বড় পুঁজি এনে দিতে। তাই জয়ের দায়িত্বটা নিতে হচ্ছে বোলারদেরই। বোলিং ইনিংসের শুরুতে দুর্দান্ত কিছু করে এখন তারাই দেখাচ্ছেন জয়ের স্বপ্ন। ‘সহজ’ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের জন্য ১৪৫ রানই এখন হয়ে উঠেছে পাহাড়সম। এই পাহাড় সফরকারীরা জয় করতে পারবে কিনা সেটার উত্তর মিলছে আগামীকাল রোববারই।