টাকার হিসাব পায়নি সন্তানরা, তাই লাশও দাফন করেনি

অনেক সময় সন্তানের উপস্থিতি বা অর্থের অভাবে কারও কারও লাশ দাফনে বিলম্ব হয়। কিন্তু মনির আহমদ রেখে গেছেন পাঁচ সন্তান, তবুও তার লাশ দাফন করা হয়নি দেড় দিনেও। বাবার টাকার হিসাব পেলেই তারা লাশ দাফন করবেন বলে জানা গেছে। ঘটনাটি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার।

টাকার হিসাব পায়নি সন্তানরা, তাই লাশও দাফন করেনি

জানা গেছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মনির আহমদ (৬৫) গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় ইন্তেকাল করেন। তিনি পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেই কোম্পানির পেনশন হিসেবে যে ৫০ লাখ টাকা ভাতা পেয়েছিলেন তা এখন কোন অবস্থায় আছে, তা জানার আগে কোনো সন্তানই তার লাশ দাফন করতে রাজি নয়। ফলে দেড় দিন পেরিয়ে গেলেও বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে আছে তার লাশ।

এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এলাকাবাসী জানান, দাফন তো পরের কথা, অন্যান্য ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্যও লাশ অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হয়নি। অবসরকালীন ভাতার টাকা নিয়ে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সন্তানেরা কোনো কিছুই করতে রাজি নয়। গতকাল সরকারি বন্ধ থাকায় তারা ব্যাংক থেকে টাকার হিসাব পাননি। ফলে আজ সোমবার সকালে ব্যাংক খুললে হিসাব হাতে পেলে তারা দাফন-কাফনে নামতে পারেন।

তবে স্থানীয়রা ধারণা করছেন, হিসাব হাতে পাওয়ার পর আরেক দফা কলহের সম্ভাবনা রয়েছে মনির আহমদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে। ফলে সোমবার সকালেই যে দাফন হবে তারও নিশ্চয়তা কম।

মনির আহমদের বাড়িতে লোকজন

লাশ দাফন বাদ দিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পদ নিয়ে এমন দ্বন্দ্বের ঘটনায় এলাকাবাসী তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মনির আহমদের প্রতিবেশী এক নারী বলেন, কী যে জামানা এলো! মানুষ মারা গেলে সন্তানেরা কোরআন-দোয়াদরুদ পড়ে। কান্নাকাটি করে। কিন্তু এখানে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শোকের চিহ্নই নেই। এমনকি লাশটাও দাফন করতে দিলো না!

মনির আহমদ পেনশনের যে ৫০ লাখ টাকা পেয়েছিলেন তা নিয়েই মনির আহমদের ছেলে-মেয়ে ও নাতিরা ঝগড়ায় মেতেছে। ভাইদের দাবি, বাবা অসুস্থ থাকাকালে এক বোন চিকিৎসার নামে কৌশলে ৩০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সেই বোন তা অস্বীকার করেন। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার জন্য যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দরকার তা সোমবার সকালের আগে পাওয়া সম্ভব নয়। আর তা হাতে না পেলে দাফনের কাজে আগাতে রাজি নয় কেউ।

মনির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) জানান, আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কয়েকদিন আগে বাবাকে হাসপাতালে থেরাপি দেওয়ার অজুহাতে আমার বোন বেবী আক্তার বাবাকে ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা উঠিয়ে নেন। বাবা মারা যাওয়ার পরই আমরা খবরটি পাই। আর আমার ছোট ভাই দুপুর ১২টার দিকে সৌদি আরব থেকে আসবেন। সে এলে এবং সোমবার ব্যাংক খুললে ব্যাংকে গিয়ে হিসাব মিলানোর পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে অভিযুক্ত বোন বেবী আক্তার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার বাবা আমাকে কোনো টাকা দেননি। আমি নিজেও ব্যাংক থেকে কোনো টাকা তুলিনি। আমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই আমার অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তরেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। আমার ভাইদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাহাব উদ্দিন বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় মনির আহমদের লাশ বাড়িতে আনা হলেও এখন পর্যন্ত দাফন হয়নি। টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে সমস্যা চলছে।

এদিকে বিষয়টি সমাধান করতে পুলিশও ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ জানান, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।