সংকটকালেও শুল্কছাড় ২১ হাজার কোটি টাকা

ডলারের সংকট, রিজার্ভ সংকটসহ বিভিন্ন সংকট নিয়ে কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় গত পাঁচ মাসে ১৩ খাতে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথ্য জানা গেছে।

শুল্কছাড়ের তালিকায় রয়েছে, ভোজ্যতেল, মোবাইল ফোন শিল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পোলট্রি ও টেক্সটাইল খাত, শিল্পের যন্ত্রপাতি ও ত্রাণের জিনিসপত্র।

জনগণের সুবিধার কথা ভেবে শুল্কছাড় দেওয়া হলেও অনেক ছাড়ের সুফল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। এর সঙ্গে রয়েছে অর্থ পাচারের অভিযোগও।

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেছেন, ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে শুল্কছাড় দেওয়া হয়। তবে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এর অপব্যবহারও হয়। আমি মনে করি, শুল্কছাড় দেওয়া উচিত না। বরং কর দেবে, পণ্য আনবে। এরপর সরকার একটি বিধিমালা করবে, তাতে যদি ভোক্তা সুফলের বিষয়টি প্রমাণিত হয়, সরকার প্রয়োজনে সে খাতে প্রণোদনা দেবে। তাতে বৈদেশিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আসবে। মুদ্রা পাচার কমবে। শুল্কছাড় দিলে কোনো হিসাবই থাকে না। বরং এর আড়ালে মুদ্রা পাচার হয়।

জানা গেছে,  ক্রান্তিকাল পার করছে দেশের অর্থনীতি। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করতে হচ্ছে সরকারকে। সংকট মোকাবেলায় শুধু ব্যাংক খাত থেকে ২২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা ধার করেছে সরকার। বিদেশি উৎস, সঞ্চয়পত্র থেকে তো নিচ্ছেই। ব্যয় মেটাতে বিভিন্ন উৎস থেকে ধার করছে সরকার। তবে একই সময়ে নিজস্ব উৎস থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় করে রাষ্ট্রীয় তহবিল শক্তিশালী করা যায়নি। বরং ক্রমেই বাড়ছে রাজস্ব আয়ের ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ে যখন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি, ঠিক তখনই শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা।

জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব সংক্রান্ত এনবিআরের প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৩টি খাতের মধ্যে ভোজ্যতেলেই শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ১৭২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ শুল্কছাড়ের কারণে সাধারণত ভোক্তা সুফল পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কতটা পাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কছাড়ের সুফল কখনোই ভোক্তারা পান না। বরং ব্যবসায়ীরাই এর সুবিধাভোগী।

অন্যদিকে বেসরকারি খাতের শিল্পের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৯০৪ কোটি টাকা। মোবাইল ফোন শিল্পে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা।

এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য বিদেশ থেকে অনুদানের অনেক পণ্য আসে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থাও অনুদানের পণ্য পায়। এর জন্য গত পাঁচ মাসে সরকারের শুল্কছাড় হয়েছে ১৬২ কোটি টাকা। পোলট্রিশিল্পে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে ৩৯৭ কোটি টাকা।

টেক্সটাইল শিল্পে ছাড় দেওয়া হয়েছে ৩২৬ কোটি টাকা। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বিভিন্ন শিল্পের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে ৪৬৯ কোটি টাকা। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির অনুকূলে ছাড় দেওয়া হয়েছে ২৪৮ কোটি টাকা।

এনবিআরের দেওয়া অ্যাডভান্স ট্যাক্সে ছাড় রয়েছে এমন পণ্যের আওতায় রয়েছে ৩ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকার ছাড়। অগ্রিম আয়কর রয়েছে এমন পণ্যে দেওয়া হয়েছে ৪৪৫ কোটি টাকার ছাড়। এসবের বাইরেও এনবিআরের বিশেষ ছাড়ের আওতায় দেওয়া হয়েছে আরও ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার শুল্ক সুবিধা।