অমর্ত্য সেন: মুসলিমদের এভাবে অবহেলা করলে মাসুল গুনতে হবে ভারতকে

ভারতের বিজেপি সরকার দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলমানদের সাথে যে ধরনের আচরণ করছে, তা মোটেও উচিত হচ্ছে না। বরং দীর্ঘদিন ধরে মুসলমানদের এভাবে অবহেলা করার মাসুল একসময় ভারতকে গুনতে হবে। ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এ মন্তব্য করেছেন। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।

অমর্ত্য সেন

তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে প্রত্যেক ভারতীয়ের নির্দিষ্ট কিছু অধিকার থাকা দরকার। দেশের নাগরিক হিসেবে এটা তার দরকার। মহাত্মা গান্ধি তো এই চেষ্টাই করতেন।

বিজেপি সরকারের পাস করা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাস্তবায়ন হলে দেশে সংখ্যালঘুদের ভূমিকা খাটো করার সুযোগ পাওয়া যাবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এতে সংখ্যাগুরুরা সংখ্যালঘুদের বিরোধিতা করার আরও বেশি সুযোগ পাবে। কিন্তু এর দ্বারা দেশের যে বিরাট কোনো উন্নয়ন হয়ে যাবে, তা মনে করেন না তিনি।

সিএএ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করা হয়। সে আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে দেশটিতে আসা সংখ্যালঘুদের সহজেই ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত এই আইনের প্রয়োগ শুরু হয়নি।

অমর্ত্য সেন বলেন, এ আইনের মাধ্যমে বিজেপির মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভারতে সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমানদের ভূমিকা কমিয়ে ফেলা, তাদের গুরুত্বহীন করে ফেলা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা দাবির চেষ্টা করা। বিজেপি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এটা করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা হিন্দু সংখ্যাগুরুদের ভূমিকা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে নোবেলজয়ী এই ব্যক্তিত্ব জানান, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ সিএএ আইনের মাধ্যমে কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে ঘোষণা করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত একপেশে ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে। এর মতটাই অত্যন্ত খারাপ।

অমর্ত্য সেন বলেন, মহাত্মা গান্ধি তো এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরেক গোষ্ঠীকে লড়িয়ে দিতেন না। বরং মুসলমানদের আগে যে অবস্থান ছিল, সে পর্যায় থেকে উন্নয়নের চেষ্টা করতেন।

মুসলমানদের খাটো করার চেষ্টার ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা উল্লেখ করে অমর্ত্য সেন বলেন, দেখবেন সংখ্যালঘুদের বিশেষত মুসলিমদের এভাবে অবহেলা করার মাসুল একদিন ঠিকই গুনতে হবে ভারতকে।

এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি নিয়ে বিগত দিনে গোটা দেশ জুড়েই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। এ বিক্ষোভ সামাল দিতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে বেশ বেগ পেতে হয়। সে সময় অন্তত ১০০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়।