নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নেই ১০০ কোটি মানুষের হাসপাতালে

পৃথিবীর প্রায় একশ কোটি মানুষ চিকিৎসা নেন এমন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এখনো নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিষয়ক এক বৈশ্বিক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর আনাদোলু এজেন্সি।

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত থাকা-না-থাকা জীবন ও মৃত্যুর ব্যবধান গড়ে দিতে পারে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থা ও সাসটেইনেবল এনার্জি ফর অল যৌথভাবে ‘এনার্জাইজিং হেলথ: এক্সিলারেটিং ইলেকট্রিসিটি এক্সেস টু হেলথ কেয়ার ফ্যাসিলিটিজ’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এতে দেখা যাচ্ছে, জীবনসঞ্চারী টিকাদান, গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার এবং সর্বোপরি মানসম্মত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অতি জরুরি। যদিও বিশ্বের প্রতি আটজন মানুষের মধ্যে একজন এখনো সেই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের বরাতে স্বাস্থ্যসেবার আওতার বাইরে রয়ে গেছেন বলেই তথ্য মিলছে।

সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্য অর্জনে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের বিকল্প নেই। তবে বাস্তবে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কভারেজের বাইরে থাকা বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীর আকার যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও জার্মানি- এর চারদেশের জনসংখ্যার যোগফলের সমান।

নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুতায়নের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকায় ১০ শতাংশের বেশি হাসপাতালে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। সাব-সাহারান আফ্রিকায় অর্ধেকের বেশি হাসপাতালের বিদ্যুত ব্যবস্থা নির্ভর করার মতো নয়।

ডব্লিউএইচওর হেলদিয়ার পপুলেশনস কর্মসূচির মহাপরিচালক ডা. মারিয়া নেইরা বলেন, হাসপাতাল-ক্লিনিকের মতো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ থাকা-না-থাকার বিষয়টি জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে নির্ভরযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও টেকসই জ্বালানি নিশ্চিতে বিনিয়োগ কেবলমাত্র মহামারি মোকাবেলার জন্য নয়, সবাইকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যপূরণ এবং জলবায়ু রূপান্তরের অভিঘাত মোকাবেলার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত বিশ্ব ব্যাংকের একটি নিডস অ্যানালিসিস প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ হাসপাতালেই বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের কোনোটিতে নতুন বিদ্যুত সংযোগ, আবার কোনোটিতে জেনারেটর অথবা বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রয়োজন। এসব হাসপাতালে ন্যূনতম মানের বিদ্যুৎ নিশ্চিতে ৪৯০ কোটি ডলার তহবিল প্রয়োজন বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুতায়নকে উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং এজন্য সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, অর্থায়নকারী ও দাতা সংস্থাগুলোর সমর্থন ও বিনিয়োগ জরুরি।