ভাইরাল ছবির পেছনের গল্প

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে কত কিছুই না ঘটে। চলতি সপ্তাহে ভারতে সুইগির ডেলিভারি ব্যাগ কাঁধে বোরকা পরিহিতা এক নারীর ছবি ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেন ইউজাররা। কারও বিষ্ময় জাগে বয়স্ক কাউকে ফুড ডেলিভারির কাজ করতে দেখে। কেউ কেউ বিষয়টিকে নারীর ক্ষমতায়ন ও অচলায়তন ভাঙার প্রতীক বলে অভিহিত করেন। এবার জানা গেল আসল ঘটনা।

সুইগির ব্যাগ কাঁধে বোরকা পরিহিতা এক নারীর ছবি ভাইরাল হয়েছে

বাংলাদেশে যেমন ফুডপান্ডা, তেমনি ভারতে সুইগির ডেলিভারি পারসনরা ব্যবহার করেন ঢাউশ আকারের ব্যাকপ্যাক। সচরাচর তরুণরাই ডেলিভারির কাজ করেন। এ অবস্থায় সুইগি ব্যাগ কাঁধে বোরকা পরিহিতা নারীর হেঁটে যাবার ছবি স্বাভাবিকভাবেই অনেককে কৌতুহলী করে তোলে। সাংবাদিক সত্য ভারতী লখনৌ শহরের অলিগলিতে দিনভর হেঁটে খুঁজে বের করেছেন সেই নারীকে।

লখনৌর জগত নারায়ন রোড চকের কাছে জনতা নগরী কলোনির এক সরু গলিতে দশ ফুট বাই দশ ফুট আয়তনের এক ঘরে তিন সন্তানসহ থাকেন রিজওয়ানা। তিন বছর ধরে সংসার চালাতে অহর্নিশ পরিশ্রম করছেন তিনি।

২৩ বছর আগে বিয়ে হয় রিজওয়ানার। স্বামী অটোরিকশা চালাতেন। তা দিয়েই চলত চার ছেলেমেয়ে নিয়ে মোট ছয়জনের পরিবার। একদিন অটোরিকশা চুরি হয়। হারিয়ে যায় পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বন। উপায়ান্তর না দেখে রিজওয়ানার স্বামী ভিক্ষার পথ বেছে নেন। বাঁচতে তো হবে, সন্তানদেরও বাঁচাতে হবে! কিন্তু ভিক্ষার আয়ে কি সংসার চলে!

ঘরে ফিরে প্রতিদিন চিন্তায়, উদ্বেগে চুপ হয়ে থাকতেন রিজওয়ানার স্বামী। একদিন সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। নানা জায়গা ঘুরেও তার খোঁজ মেলেনি। বেঁচে আছেন না মরে গেছেন, জানা যায়নি। কোনো উপায় না দেখে রিজওয়ানা নিজেই পথে নামেন। সেই থেকে এক অর্থে পথেই আছেন তিনি।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকটি বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন রিজওয়ানা। বিকেল থেকে বের হন ফেরি করতে। রাস্তার ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে চা ও কফির দোকানে ডিসপোজেবল কাপ ও গ্লাস বিক্রি করেন তিনি। প্রতি প্যাকেট কাপে ২-৩ রুপি লাভ হয়। এভাবে মাসে তার ৫-৬ হাজার রুপি আয় হয়। এর বাইরে বাসাবাড়ির কাজ থেকে আসে আরও কয়েক হাজার রুপি।

ফেরি করতে ব্যাগবোঝাই প্লাস্টিকের কাপ-গ্লাস নিয়ে দৈনিক ২০-২৫ মাইল হাঁটেন রিজওয়ানা। এভাবেই দুই বছর আগে এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ঘরে আছে আরও তিন সন্তান- বুশরা (১৯), নুশরা (৭) ও ইয়াসিন (১১)। তাদের জন্যই অবিরত পথচলা।

তাহলে কাঁধে সুইগির ব্যাগ কেন, জানতে চাইলে রিজওয়ানা বলেন, ‘আমি ওদের চাকরি করি না। কাপ-গ্লাস নিয়ে পথ চলতে আমার একটা শক্ত ব্যাগ দরকার। এক ফেরিওয়ালার কাছ থেকে এটা কিনেছি। ৫০ রুপি দাম রেখেছে।’