ফ্রান্সে অবসরের বয়স বৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘট

অবসরের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পেনশন পরিকল্পনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে দ্বিতীয় দফায় ধর্মঘট চলছে। মঙ্গলবার ধর্মঘটে দেশটির আটটি বড় ইউনিয়ন অংশ নিয়েছে। এদিকে ধর্মঘটের কারণে স্কুল, গণপরিবহন এবং তেল শোধনাগারের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। খবর বিবিসি।

পেনশন সংস্কার পরিকল্পনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

সংস্কার প্যাকেজের অংশ হিসাবে ন্যূনতম অবসরের বয়স ৬২ থেকে ৬৪ বছর বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে ম্যাক্রোঁ সরকার। এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ কর্মী দেশব্যাপী দ্বিতীয় দফা ধর্মঘটে নামছে। অর্ধেক প্রাথমিক শিক্ষক ধর্মঘটে রয়েছে।

ম্যাক্রোঁ সরকার জনমত জরিপের মুখে পড়েছে পেনশন সংস্কারের পরিকল্পনা। জরিপে দেখা গেছে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার এটি পরিবর্তনের বিরোধিতা করছে। আগামী সপ্তাহে জাতীয় পরিষদের মাধ্যমে বিলটি সংসদে উঠবে।

তবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে ক্ষমতাসীন দলগুলোর নিজস্ব এমপিদের মতো সমর্থনের জন্য বিরোধী ডানপন্থী রিপাবলিকানদের ওপর নির্ভর করতে হবে সরকারকে।

ধর্মঘটকারীদের সমর্থনে বিক্ষোভে অংশ নেয় হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা

বামপন্থী নেতা জিন-লুক মেলেনচন বলেছেন, আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। বিক্ষোভের প্রথম দিন ১৯ জানুয়ারির তুলনায় আরও বেশি সংখ্যক কর্মচারি এতে অংশ নিয়েছে। সমস্ত বড় শহর এবং ছোট শহরগুলোতে বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে সারা দেশে ১১ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্যারিসে তিনটি উচ্চ-গতির ট্রেনের মধ্যে একটি চলমান। শুধুমাত্র দুটি চালকবিহীন মেট্রো লাইন স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। রাজধানীর একটি প্রধান ওভারগ্রাউন্ড লাইনে ব্যাপক ভিড়ের খবর পাওয়া গেছে। সর্বত্র পরিবহন ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।

সিজিটি ইউনিয়ন বলেছে, অন্তত তিন-চতুর্থাংশ কর্মী তেল শোধনাগার এবং জ্বালানী ডিপো থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।

স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইউনিয়নকে জানিয়েছে যে, সমস্ত নার্সারি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষক ধর্মঘটে থাকবেন। হাই স্কুলের ছাত্ররা কিছু স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ করেছে। ছাত্ররা বলেছে, যে তারা ধর্মঘটকারীদের সমর্থনে প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয় দখল করবে।

সায়েন্সেস পো'র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ব্রুনো পালিয়ার বিবিসিকে বলেছেন, 'অনেক ফরাসি মানুষ মনে করেন যে কাজ করা আরও বেশি বেদনাদায়ক। এটা এমন নয় যে তারা কাজ করতে চায় না, তারা এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে চায় না।'

তবে সরকারের পক্ষ থেকে ইঙ্গিতে বলা হয়েছে, এটি সংস্কারে দেশ কিছুটা এগিয়ে যেতে পারে। তবে অবসরের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৬৪ করার উপর জোর দিতে অস্বীকার করেছেন অনেকেই।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ফিলিপ আঘিয়ন বলেছেন, ফ্রান্সের কাঠামোগত ঘাটতির কারণে সংস্কারগুলো প্রয়োজনীয়। এতে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ইউরো (১৪ বিলিয়ন ডলার) এবং অবসরের বয়স বাড়ানো ফ্রান্সে কর্মসংস্থানের হার বাড়াতেও সাহায্য করবে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, 'এটি সরকারকে কিছু বিনিয়োগ করতে বিশ্বাস যোগাবে। যা দিয়ে স্কুল, হাসপাতাল ব্যবস্থায় উন্নতি, নতুন আবিষ্কার এবং সবুজ শিল্পায়নে আরও বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে।'