আদানির বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি পর্যালোচনা চায় বাংলাদেশ

ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি পর্যালোচনা করতে চায় বাংলাদেশ। কয়লার অত্যধিক মূল্য চাওয়ায় চুক্তি পর্যালোচনার জন্য আদানি গ্রুপকে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এদিকে ভারত সরকার চুক্তিটির সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে। খবর ইউএনবি, হিন্দুস্তান টাইমস।

কয়লার অত্যধিক দাম চাওয়ায় আদানি গ্রুপকে চুক্তি পর্যালোচনা করতে বলেছে পিডিবি

ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় আদানি গ্রুপের নির্মিয়মান বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে বিদ্যুত ক্রয়ের জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি অনুযায়ী, ১৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানির সব খরচ বাংলাদেশের দেওয়ার কথা।

পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, আদানি গ্রুপ সম্প্রতি কয়লা আমদানির জন্য ডিমান্ড নোট চেয়ে পিডিবিকে চিঠি দেয়। ওই ডিমান্ড নোট দেখিয়ে ভারতে কয়লা আমদানির এলসি করতে হবে বলে আদানি জানিয়েছে। ডিমান্ড নোটে প্রতি টন কয়লার ৪০০ মার্কিন ডলার দাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাজার দরের চেয়ে কয়লার দাম অনেক বেশি দেখানোয় চুক্তিটি পর্যালোচনার জন্য চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ।

জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন কারমাইকেল কয়লা খনি থেকে গোড্ডা বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি করা হবে। আমদানি মূল্যের পাশাপাশি ভারতের বন্দরে পৌঁছার পর বিদ্যুতকেন্দ্র পর্যন্ত কয়লা পরিবহনের খরচও বাংলাদেশকে দিতে হবে।

পিডিবির একজন পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান বাজার দরের চেয়ে কয়লার অনেক বেশি দাম দেখিয়েছে আদানি গ্রুপ। প্রতি টন কয়লা আড়াইশ ডলারের কম হওয়ার কথা। আমরা অন্যান্য তাপবিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য এ দামেই কয়লা কিনছি।

সূত্র জানায়, সাধারণত নিউক্যাসল প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী কয়লার দাম হিসাব করা হয়। ওই সূচক মতে, বেশি পরিমাণ কয়লা কিনলে ক্রেতাপক্ষ বাল্ক ভ্যালুর ওপর ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ-চীন যৌথ মালিকানার পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রের কয়লা কেনার ক্ষেত্রে পিডিবি এমন ছাড় পাচ্ছে।

এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন জানিয়েছে, আদানি গ্রুপের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ক্রয় চুক্তিতে ‘ছাড়’ অপশনটি রাখা হয়নি। ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের চাপাচাপির কারণে তড়িঘড়ি ওই চুক্তি হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বিদ্যুত বিভাগ তারিখ নির্ধারণ করলেও আদানি গ্রুপের চাপে দিনক্ষণ এগিয়ে আনতে হয়। বিদ্যুত বিভাগের শীর্ষ ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সিংহভাগ ওই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, যেহেতু গোড্ডা বিদ্যুতকেন্দ্রের সব বিদ্যুত বাংলাদেশ কেনার কথা, তাই সেখানে প্রয়োজনীয় কয়লার জোগানও বাংলাদেশকে দিতে হবে। বছরে কেন্দ্রটিতে ৭০-৯০ লাখ টন কয়লা প্রয়োজন। আদানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত ক্রয় চুক্তিতে মূল্য ছাড়ের বিষয়টি না থাকায় বাংলাদেশকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ২০-২২ টাকা মূল্য পরিশোধ করতে হবে, যদিও দেশের ভেতরে একই ধরনের কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিট ১২ টাকা দরে বিদ্যুত কিনছে।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি নিয়ে যে ইস্যু উঠেছে, তার সঙ্গে দুই দেশের সামগ্রিক সম্পর্কের কোনো যোগ নেই। এটা একটা সার্বভৌম সরকারের সঙ্গে একটা বেসরকারি কোম্পানির চুক্তি।

আদানির সঙ্গে চুক্তি পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশের চিঠির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, অবশ্যই আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আরও বেশি অর্থনৈতিক সংযোগ, প্রকল্প সমন্বয় চাইব। তবে কোনো একটি প্রকল্প যদি আর্থিক বা অর্থনৈতিক কারণে কার্যকর না হতে পারে, তার সঙ্গে দুই দেশের অংশীদারিত্বের তুলনা চলে না।