হাল্যান্ডকে ডাকছে ৯৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড

এই মৌসুমে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিয়েছেন আর্লিং হাল্যান্ড। নতুন ঠিকানায় এসেই গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন নরওয়েজান এই স্ট্রাইকার। করেছেন একের পর এক গোল; গড়েছেন নতুন নতুন ইতিহাস। সিটি প্রাণভোমরাকে হাতছানি দিচ্ছে আরও বড় ইতিহাস। যেটি ৯৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড। যেটি ভাঙতে হলে অতিমানবী কিছু করে দেখাতে হবে তাকে।

ইংলিশ লিগের এই মৌসুমে ১৯ ম্যাচে ২৫ গোল করেছেন আর্লিং হাল্যান্ড

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক মৌসুমে ইতোমধ্যে ১৯ ম্যাচে ২৫ গোল করে ফেলেছেন হাল্যান্ড। এরমধ্যে প্রথম আট ম্যাচেই পেয়েছেন ১৪ গোল। এ সময়ে ক্রিস্টাল প্যালেস ও নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন নরওয়েজান সেনসেশন। পুরোপুরি ফিট থাকলে এবং ছন্দটা ধরে রাখতে পারলে প্রিমিয়ার লিগ যুগে এক মৌসুমে এন্ডি কোল ও এলান শিয়েরারের সর্বোচ্চ ৩৪ গোলের রেকর্ডটা নিশ্চিতভাবেই ভেঙে ফেলবেন হাল্যান্ড।

কিন্তু প্রিমিয়ার লিগপূর্ব আগের রেকর্ডটা ভেঙে দিতে পারবেন তো সিটি স্ট্রাইকার? যে রেকর্ডটা ১৯২৭-২৮ মৌসুমে গড়েছিলেন এভারটন কিংবদন্তি উইলিয়াম রাল্ফ ডিন। ওই মৌসুমে ৩৯ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬০ গোল করেছিলেন ডিক্সি নামে পরিচিত ইংলিশ এই স্ট্রাইকার। তার রেকর্ডটি আজও টিকে আছে। রেকর্ড ভেঙে দেওয়া তো দূরের কথা, এর ধারেকাছেও যেতে পারেননি কেউ।

নিজের রেকর্ডটি নিয়ে বহু বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে ডিক্সি বলেছিলেন, 'লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করে ৬০ গোলের রেকর্ড ভেঙে দেওয়া কি সম্ভব? আমার মনে হয় সম্ভব। কেবলমাত্র একজন লোকই পারবেন, যিনি পানির ওপর দিয়ে হাঁটতে পারবেন।' প্রশ্ন উঠছে হাল্যান্ড কি এখন ওপর দিয়ে হাঁটতে পারছেন?

ডিক্সি ভেঙেছিলেন ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের টেড হার্পারের এক মৌসুমে ৪৩ গোলের রেকর্ড। যেটা ১৯২৫-২৬ মৌসুমেই করেছিলেন হার্পার। তার রেকর্ডটা ডিক্সি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন দুই বছর পরই। ডিক্সির রেকর্ডের কাছাকাছি বলতে ১৯৩০-৩১ মৌসুমে ৪৯ গোল করেছিলেন এস্টন ভিলার টম ওয়ারিং। এরপর ইংলিশ লিগের এক মৌসুমে ৪০ গোল করতে পেরেছেন স্রেফ একজন। তিনি জিমি গ্রেভেস৷ সেটাও ৬০ বছর আগে।

এবার হাল্যান্ডের গোলবন্যা মনে করিয়ে দিচ্ছে ৯৫ বছর আগে গড়া ডিক্সির রেকর্ডটা। দুজনের গোলের প্রবাহ অনেকটা কাছাকাছি। তবে শারীরিকভাবে দুজনের মধ্যে বিরাট ফারাক। ডিক্সির উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি। আর হাল্যান্ডের ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চি। উচ্চতা যেমনই হোক দুজনেই প্রতিপক্ষের রক্ষণ তছনছ করে দিতে বেশ পটু।

ডিক্সির স্বপ্নের মৌসুমের সঙ্গে এবার তুলনা করা হচ্ছে হাল্যান্ডের মৌসুমকে। দুজনই লিগের প্রথম ম্যাচে গোল করেছিলেন। ডিক্সি শুরুর আট ম্যাচে করেছিলেন ১২ গোল। দুটি বেশি করেছেন হাল্যান্ড। নবম ম্যাচে গিয়ে দলের পাঁচ গোলের সবকটিই করেছেন ডিক্সি। ১৯ ম্যাচে তার গোল ছিল ৩০টি। পাঁচটি কম গোল হাল্যান্ডের।

৪২ রাউন্ডের লিগে তিন ম্যাচে খেলতে পারেননি ডিস্কি। তিন ম্যাচে পাননি আবার গোলের দেখা। যা পুষিয়ে দিয়েছেন শেষ আট ম্যাচে ১৭ গোল করে! তার রেকর্ড ভাঙতে হলে তেমনই অবিশ্বাস্য কিছু করতে হবে হাল্যান্ডকে। যেমনটা মৌসুমের শুরুর দিকটায় করেছিলেন তিনি। চোট ছন্দে বাধা হয়ে না দাঁড়ালে হয়তো আরও গোল করতে পারেন হাল্যান্ড।

ইংলিশ লিগের এই মৌসুমে ইতোমধ্যে কুড়িটি ম্যাচ খেলেছে ম্যানচেস্টার সিটি। লিগে তাদের ম্যাচ বাকি আছে আর ১৮টি। এরমধ্যে হাল্যান্ড সবকটি ম্যাচ খেলতে পারেন কি না সেটাও দেখার বিষয়। ডিস্কির রেকর্ড ভাঙতে তার দরকার ৩৬টি। যা অনেক কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু নয়। অন্তত নরওয়েজান স্ট্রাইকারের জন্য!