কোথায় হারালেন কাবার তিন দশকের ইমাম ড. শুরাইম!

দীর্ঘ তিন দশক ধরে পবিত্র কাবা শরিফের লাখ লাখ মুসল্লি শায়খ ড. সাউদ বিন ইব্রাহিম আল-শুরাইমের তেলাওয়াতে মুগ্ধ হয়েছেন। সুললিত কণ্ঠের সুন্দর তিলাওয়াতের জন্য তিনি সবার কাছে ‘রাইহানুতুল হারাম’ বা হারাম শরিফের সুগন্ধি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই শায়খ শুরাইমকে দুই বছর ধরে দেখা যাচ্ছে না কাবার ইমামতিতে। অথচ তার অবসর নেওয়া বা তাকে বাদ দেওয়ার কোনো ঘোষণা সৌদি বা কাবা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়নি। খবর আরব নিউজ।

ড. শুরাইম

সাউদ শুরাইমের জন্ম ১৯৬৬ সালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পুরো নাম সাউদ বিন ইব্রাহিম বিন মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম আল শুরাইম। শৈশব থেকেই ইসলামের মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে মনোযোগী ছিলেন তিনি। পবিত্র কোরআন ছিল তার আবেগ ও আগ্রহের বিষয়। সেই ধারাবাহিকতায় শিক্ষাজীবনে তিনি কোরআন সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

ড. শুরাইম রিয়াদের ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৮৯ সালে আকিদা ও আধুনিক মতবাদ বিষয়ে স্নাতক, ১৯৯৩ সালে সুপ্রিম জুরিসডিকশন ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

কাবা শরিফের ইমামতিতে ড. শুরাইম

১৯৯২ সালে ড. শুরাইম মক্কার সর্বোচ্চ কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। এর কিছুদিন পরই সৌদির সাবেক বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ তাকে পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন। তখন থেকে তিনি পবিত্র কাবা শরিফের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৯৯ সালে ড. শুরাইম মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী আইন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে তিনি আইন ও জুডিশিয়ারি বিভাগের ডিন হিসেবে দীর্ঘ এক দশক দায়িত্ব পালন করেন। তার উদ্যোগেই সে বিশ্ববিদ্যালয়ে জুডিশিয়াল স্টাডিজ অ্যান্ড রেগুলেশনস এবং ইসলামিক ইকোনমিক অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সায়েন্স নামে দুটি বিভাগ চালু হয়। ড. শুরাইম কাবা শরিফ প্রাঙ্গণেও বিভিন্ন ইসলামী গ্রন্থের দরস দিতেন।

কাবা শরিফের মুসল্লিরা তার তেলাওয়াতের পাগল ছিলেন। তারা অধীর আগ্রহে ড. শুরাইমের তেলাওয়াত শোনার অপেক্ষা করতেন। ফলে এক সময় তার উপাধি হয়ে ওঠে হারাম শরিফের সুগন্ধি। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে তাকে কাবা শরিফের ইমামতি করতে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কী কারণে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন না এক ধরনের রহস্যই থেকে গেছে। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি। অন্যদিকে তিনিও এ ব্যাপারে সরাসরি কিছু জানাননি। তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ৩০ বছর ধরে আমি আমার দ্বীন, সম্মানসহ সব কিছু রক্ষা করেছি। আল্লাহর শপথ! আমি তাঁর সান্নিধ্যে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। পবিত্র ঘরের সান্নিধ্য আমার কাছে ঘুঘুর হারের মতোই (সবচেয়ে মূল্যবান)।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তার প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। আবার অনেকে তাকে ফের দায়িত্বে ফেরাতে সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।