আপনি পড়ছেন

যুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক মৌলিকভাবে ব্যাপক পরিবর্তিত হয়েছে। রুশ-ইউক্রেনীয়দের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এখন আগের মতো নেই। ভেঙে গেছে রুশ-ইউক্রেনীয় ভ্রাতৃত্বের মিথ। আটলান্টিক কাউন্সিলের এক নিবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 

russian ukraineanরাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত ইউক্রেনের ভবন

নিবন্ধটি লিখেছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কিয়েভ মহিলা একাডেমির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক তারাস কুজিও। তিনি ‘ফ্যাসিজম অ্যান্ড জেনোসাইড : রুসা’স ওয়ার এগেইনিস্ট ইউক্রেনিয়ানস’ বইয়েরও লেখক। নিবন্ধে তিনি দেখিয়েছেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কিভাবে রুশ ও ইউক্রেনীয জাতিগত দ্বন্দ্ব জমাট বেঁধেছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ান কিংবা রাশিয়ান ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা অনেক। ২০০১ সালের ইউক্রেনীয় আদমশুমারিতে দেখা যায়, দেশটিতে জাতিগত রাশিয়ানদের সংখ্যা ৮৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০০ জন, যা ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার ১৭.৩ শতাংশ। পরবর্তীতে এই সংখ্যা আর বাড়েনি, বরং কমেছে।

আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের জনসংখ্যার ২৯.৬ শতাংশ বা প্রায় এক কোটি ৮৩ লাখ লোক রাশিয়ান ভাষা ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ জাতিগতভাবে খাঁটি ইউক্রেনিয়ান।

ওই নিবন্ধে বলা হচ্ছে, রাশিয়ান-ইউক্রেনীয় সম্পর্ক শুরু থেকেই অস্থির, যা কয়েক শতাব্দী ধরে চলমান। রাশিয়া মূলত কখনও ইউক্রেনের স্বাধীনতা চায়নি। ইউক্রেনকে স্বাধীনতার দাবি থেকে বিরত রেখে রাশিয়া প্রভাবশালী অবস্থান ধরে রাখতে চেয়েছে সবসময়। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুইদেশেরই জনগণ।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, পুতিনের হামলা শুরুর পর থেকে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় যেমন জীবন বাঁচাতে দেশ থেকে পালিয়েছে, তেমনি রাশিয়া থেকেও পালিয়েছে লাখ লাখ নাগরিক। পুতিনের যুদ্ধ মূলত নিজ দেশের জনগণকেও নির্বাসনে পাঠিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পরই রাশিয়া ছেড়ে পালায় ৫ লাখ নাগরিক। ২০২২ সাল শেষে এই সংখ্যা ১০ লাখে গিয়ে ঠেকেছে।

রাশিয়ানদের একটা বড় সংখ্যা আর্মেনিয়া কিংবা কাজাখস্তানে পালিয়েছে। আবার বহু মানুষ ভিসা নিয়ে ফিনল্যান্ড, বাল্টিক রাজ্যে বা ইউরোপের অন্য কোনো দেশে চলে গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরায়েল, থাইল্যান্ড কিংবা আর্জেন্টিনাতেও চলে গেছেন অনেকে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে রাশিয়ার যোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানায়, ১০ শতাংশ আইটি কর্মী গত বছর রাশিয়া ত্যাগ করার পর আর ফিরে আসেননি।

নিবন্ধে আরও বলা হচ্ছে, রাশিয়ার আগ্রাসনের বর্বরতা পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের প্রধানত রুশভাষীদেরও অতিমাত্রায় প্রভাবিত করেছে। এর ফলে রাশিয়ার প্রতি তাদের আগের মনোভাবের ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটে গেছে। কারণ এই অঞ্চলের কয়েক ডজন শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং লাখ লাখ লোককে জোরপূর্বক নির্বাসনের শিকার হতে হয়েছে।

ফলে রাশিয়া বিরোধী মনোভাব যা ঐতিহ্যগতভাবে মধ্য ও পশ্চিম ইউক্রেনে বেশি ছিল, তা এখন দক্ষিণ ও পূর্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। রেটিং সোসিওলজিক্যাল গ্রুপ পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৯৮ শতাংশ ইউক্রেনীয় বিশ্বাস করে করে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী যুদ্ধাপরাধের জন্য দোষী। অন্যদিকে ৮৭ শতাংশ মনে করে, রাশিয়ান নাগরিকরাও দায়বদ্ধ।

ইউক্রেনীয়রা এখন অপ্রতিরোধ্যভাবে রাশিয়ান জনসংখ্যার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে। সাধারণ রাশিয়ানদের যুদ্ধংদেহী মনোভাব আরও বেড়েছে। বেশিরভাগ রাশিয়ান এখন আন্তরিকভাবে যুদ্ধকে সমর্থন করে। রাশিয়ানরা ইউক্রেনে সংঘটিত নৃশংসতা স্বীকার করতেও নারাজ।

নিবন্ধে বলা হচ্ছে, যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কের ভাঙন এখন ‘নো রিটার্নের’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের প্রমাণ এখন ইউক্রেনীয় সমাজজুড়ে দেখা যায়। বিপুল সংখ্যক ইউক্রেনীয় রাশিয়ান ভাষার পরিবর্তে ইউক্রেনীয় ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ডি-রুসিফিকেশন বা রাশিয়ান থেকে পরিবর্তনের প্রচেষ্টা তৃণমূলে নতুন গতি পেয়েছে।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.