আপনি পড়ছেন

৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্প তুরস্কের পাশাপাশি সিরিয়ার উত্তরঞ্চলেও আঘাত হানে। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের ফলে উভয় দেশেই হাজার হাজার বাড়িঘর এক মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফলে আশ্রয় হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। দীর্ঘ এক দশকের গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত উত্তর সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের বাসিন্দারা ভূমিকম্পের ফলে ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন কবরস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। খবর দ্য ন্যাশনাল

aleppo cemeteryভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়াদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে আলেপ্পো কবরস্থান

আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলে সালহিন কবরস্থানটি এখন আর কেবল মৃতদেরই নয় বরং ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া জীবিতদেরও আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।

৪২ বছর বয়সসী রানিয়া আল খাতিব কবরস্থানের মধ্য দিয়ে তার বাচ্চাদের সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার সময় আরব আমিতারের নিউজ ওয়েবসাইট দ্য ন্যাশনালকে জানিয়েছেন, এটি এমন একটি স্থান যা তাকে অস্থায়ীভাবে হলেও নিরাপত্তা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ির কাছেই এই কবরস্থান। আমাদের বাড়িঘর সব ধ্বংস হয়ে গেছে, তাই আমরা এখানে থাকি। এটা ঠিক যে আমরা এখন বেঁচে আছি এবং যারা দুনিয়া থেকে চলে গেছে তাদের সঙ্গেই বেঁচে আছি।'

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর দিকে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো শহরটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। পরবর্তীতে বাশার আল আসাদের সরকার এটি বিদ্রোহীদের দখলমুক্ত করতে সক্ষম হয়। বছরের পর বছর যুদ্ধের মধ্যে থাকার পর যখন মানুষজন নতুন করে ঘর বাড়ি নির্মাণ শুরু করছিল, ঠিক সেই মুহূর্তেই আঘাত হানে ভয়াবহ এই ভূমিকম্প।

নিজেদের দুর্ভাগ্য সম্পর্কে রানিয়া বলেন, ‘আমরা মৃতদের সঙ্গে বসবাস করছি। আমরা জানি না কোথায় যেতে হবে। আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি এবং ধ্বংস হয়েছে। তাই কবরস্থান ছাড়া আমাদের কাছে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বিকল্প কিছু নেই।'

সারিবদ্ধ পাথরের কবরের মধ্যে রানিয়াসহ আরও অন্যান্যদের বাচ্চারা খেলা করছিল। তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকেন, 'ভূমিকম্পের রাতটি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর একটি রাত ছিল। মুহূর্তের মধ্যেই আমার ঘরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে গেল। এখন সেখানে বাস করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ইসলামি ঐতিহ্য অনুযায়ী আমরা বাইরে যাওয়ার সময় নিকাব পরি। কিন্তু ভূমিকম্পের সময় আমি যখন রাস্তায় নেমে এসেছিলাম তখন এসব কিছুই আমার মাথায় ছিল না।'

ভূমিকম্প থেকে যারা বেঁচে গিয়েছিলেন তাদের জন্য সিরিয়ার সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ক্রীড়া স্টেডিয়ামগুলোতে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের দীর্ঘমেয়াদী আশ্রয়ের জন্য সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছালেও আলেপ্পোর পশ্চিমে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিবের বাসিন্দারা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাননি।

আলেপ্পোর আরেক বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী আম্মার হোকানও পরিবার নিয়ে এখন কবরস্থানে বসবাস করছেন। তিনি দ্য ন্যাশনালের প্রতিবেদককে বলেন, 'আমরা কীভাবে বেঁচে আছি তা আপনাকে বলার দরকার নেই। কারণ আপনি নিজের চোখেই আমাদের অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের শিশুরা রাতে ভয়ে জেগে থাকে। তারা একটি ট্রমার মধ্যে আছে।'

এদিকে রানিয়া বলেন, ‘শিশু এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে আমি এখন বেশি চিন্তিত। আমাদের আশ্রয় দরকার, আমাদের মাথার উপর একটি ছাদ দরকার।'

উল্লেখ্য, ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ৭.৮ এবং ৭.৭ মাত্রার দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর ফলে উভয় দেশেই সম্মিলিতভাবে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.