ডলার সংকট কাটাতে এবার স্বল্পমেয়াদি ঋণ

ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে সরকার। বিশ্ব ব্যাংক থেকে এ ধরনের ঋণ নিতে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। আর্থিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।

স্বল্প মেয়াদি ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

সূত্র জানায়, ২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বাড়াতে চাইছে। গত এক দশকে অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি ঋণের চাপ বৃদ্ধির মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইআরডির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বল্পমেয়াদি বা নন-কনসেশনাল ঋণের বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন স্ট্যান্ডিং কমিটি ২০১৩-২০২১ সময়কালে ৬৫টি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার স্বল্প মেয়াদি ঋণ কাজে লাগানো হয়। এর প্রায় সমপরিমাণ ঋণ তখন পাইপলাইনে ছিল।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এমনিতেই যেহেতু চাপে আছে, এ অবস্থায় যথাযথভাবে কাজে লাগাতে না পারলে স্বল্পমেয়াদি ঋণগুলো রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ হয়ে আসবে। ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০ কোটি) ডলার, যা ফেব্রুয়ারি নাগাদ ৩২ বিলিয়ন (৩ হাজার ২০০ কোটি) ডলারে নেমেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে কোনো বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের আগে অর্থনৈতিক সুবিধা ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। অন্যথায় সেটা ভবিষ্যতে ঋণের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন (২৪০ কোটি) ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছর নাগাদ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ৪ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়নে (৪০২ কোটি) দাঁড়াবে বলে ইআরডির প্রাক্কলনে দেখা যায়।

এর আগে ২০১০ অর্থবছরে দেশের সার্বিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৮৭৬ মিলিয়ন (৮৭ কোটি ৬০ লাখ) ডলার।

ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, তারা শীঘ্রই বিশ্ব ব্যাংকের নতুন ঋণের বিষয়ে আলোচনা শুরু করবেন। ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ দেওয়া এই ঋণ পরবর্তী ১২ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তবে এ ঋণে বিশ্ব ব্যাংকের অন্যান্য আইডিএ (ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন) ঋণের মতো সুদ বা সার্ভিস চার্জ দিতে হবে না বলে তারা জানান। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের আগে পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের নতুন কর্মসূচি থেকে বার্ষিক ২৫০ মিলিয়ন (২৫ কোটি) ডলার ঋণ টার্গেট করা হয়েছে বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসাইন বলেন, সুদহারের কথা বিবেচনা করলে এ ঋণ আকর্ষণীয়। তবে যেহেতু স্বল্প মেয়াদি ঋণ, তাই ঝুঁকি থেকে যায়।

বিরাজমান ডলার সংকটের কারণে সরকার এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে। তিন বছরে পাওয়া ওই ঋণের পুরো অর্থ।

আগামী বছরগুলোয় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমশ বাড়বে। বেশকিছু বড় ধরনের অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধের সময় ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে।

১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন (১ হাজার ১৩৮ কোটি) ডলার বৈদেশিক ঋণে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র। বার্ষিক ৪ শতাংশ সুদে নেওয়া ওই ঋণের প্রথম কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ২০২৭ সালের মার্চে। রাশিয়া থেকে নেওয়া এ ঋণের ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড তখন শেষ হবে।

স্বল্পমেয়াদি ঋণে বাস্তবায়নাধীন কিছু প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষের আগেই ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে।

যেমন, আমদানি করা জ্বালানি তেল গভীর সমুদ্রে নোঙর করা জাহাজ থেকে আর সহজে ও দক্ষতার সঙ্গে আনলোডের জন্য ২০১৫ সালে কক্সবাজারে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) ডবল পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি শেষ হবার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত তিন দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী মাসে এই প্রকল্পের ঋণের পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হবে। যদিও এরইমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আরও একদফা বাড়িয়ে জুন ২০২৩ পর্যন্ত করা হয়েছে।