ইতিহাস বলছে, এবার ‘ঘুরে দাঁড়াবে’ মুম্বাই

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সাফল্যমন্ডিত ফ্রাঞ্চাইজি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। টু্র্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি। তবে গত মৌসুমটা একদমই ভালো যায়নি নিতা আম্বানির মালিকানার দলটির। আইপিএল ইতিহাসে প্রথমবার পয়েন্ট তালিকার একদম তলানিতে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে মুম্বাই।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

সেখান থেকে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জ মুম্বাইয়ের। ২০০৮ সাল থেকে শুরু করা দলটির প্রথম সাফল্য আসে ২০১৩ সালে। এরপর এক বছর পরপরই কাপ জিতেছে মুম্বাই। সবশেষ ২০১৯ ও ২০২০ আসরে টানা চাম্পিয়ন হয় রোহিত শর্মার দল। সেই দলটিই গত দুই মৌসুমে ব্যর্থতার চোরাবালিতে ঘুরপাক করছে।

২০১০ সালে প্রথম ফাইনাল খেলে মুম্বাই। এরপর টানা তিন মৌসুমে ফাইনাল উঠতে পারেনি এমন নজীর নেই দলটির। সবশেষ ২০২০ সালের চ্যাম্পিয়নরা গত দুই আসরে ব্যর্থ হয়েছে। দলের রেকর্ড বলে, এবার তারা ঘুরে দাঁড়াবে। মুম্বাই কি জিতবে তাদের ষষ্ঠ শিরোপা? উত্তরটা সময়ের কাছেই তোলা থাক।

বড় তারকা

মুম্বাইয়ে বড় তারকার অভাব নেই। সূর্য কুমার যাদব নিঃসন্দেহে টি-টোয়েন্টেতে এই মুহূর্তে অন্যতম জনপ্রিয় এবং তারকা ক্রিকেটার। তা ছাড়া রোহিত শর্মা তো আছেনই। এ তালিকায় নাম থাকবে টিম ডেভিড এবং জফরা আর্চারদেরও।

শক্তিমত্তা

মুম্বাইয়ের শক্তিমত্তা তাদের টপঅর্ডার ব্যাটিং। দলটির ইনিংস শুরু করেবেন রোহিত এবং ইশান কিষান। নিজেদের দিনে এই দুই ব্যাটার কী করতে পারেন এটা সবারই কম-বেশি জানা। ব্যাটিং লাইনআপে এরপরে আসবে সূর্য কুমার, টিম ডেভিড কিংবা ত্রিস্টান স্টাবসরা। শর্টার ফরম্যাটের অন্যতম মারমুখী ব্যাটিং লাইনআপ বোধহয় এই দলটারই। তাই ব্যাটাররাই হতে পারেন মুম্বাইয়ের শক্তির দিক।

তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে মুম্বাইয়ের টিম ম্যানেজমেন্টকে কিছুটা চিন্তায় রেখেছেন সুর্য। অনেকে বলাবলি করছে ফুরিয়ে গেছে সূর্যের তাপ। যদিও সেটা ছিল ৫০ ওভারের ফরম্যাট। টি-টোয়েন্টিতে আগের বিধ্বংসী রূপেই সূর্যকে দেখা যাবে বলে আশা রাখছেন মুম্বাই সমর্থকরা।

বোলিংয়ে বরাবরই শক্তিশালী মুম্বাই এবার কিছুটা ব্যাকফুটে থাকবে। কারণ দলটি ইনজুরির কারণে পাবে না জাসপ্রিত বুমরাহকে। গত কয়েক বছর ধরে এই দলের বোলিংয়ের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

এবার পেস অ্যাটাকে ভরসা হতে পারেন জফরা আর্চার, মার্কো জ্যানসেন অথবা ঝাই রিচার্ডসনরা। দেশীয়দের মধ্যে অর্জুন টেন্ডুলকার, আরশাদ খানরা হতে পারেন বাজির ঘোরা।

দুর্বলতা

মুম্বাইয়ের বড় দুঃশ্চিন্তার কারণ তো অবশ্যই বুমরাহ। এই পেসারকে না পাওয়াটা তাদের ভোগাবে হয়ত। এটা রোহিত শর্মাও স্বীকার করেন। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বুমরাহকে না পাওয়াটা আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতির। তাকে মিস করবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।’

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অলরাউন্ডার বড় একটা ফ্যাক্ট। এটা মেনে প্রায় সব ফ্রাঞ্চাইজি কিছু তারকা অলরাউন্ডার দলে ভিড়িয়েছে। এই জায়গাটাতে পিছিয়ে থাকবে মুম্বাই। অলরাউন্ডার তালিকায় দলে ক্যামেরুন গ্রিন বাদে তেমন বড় নাম নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার ডিওয়াল ব্রেভিস আছেন যদিও। তবে ব্যাটিংয়ে যতটা আগ্রাসী বোলিংয়ে অনেকটাই পিছিয়ে এই অলরাউন্ডার।

এছাড়া স্পিন অ্যটাকও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। পেসারদের ওপর অতি ভরসা কাল হতে পারে ফ্রাঞ্চাইজিটির জন্য। দলে বিশ্বমানের কোনো স্পিনার না থাকাটা বোলিংয়ে বৈচিত্র হারাবে নিঃসন্দেহে। যেটা ছোট দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে খুব দরকারি।

যদিও পিযুষ চাওলা মুম্বাই শিবিরে আছে, তবে ফর্ম তার পক্ষে কথা বলছে না। সম্প্রতি বিজয় হাজরা ট্রফিতে ৬ ম্যাচ খেলে নিয়েছে পাঁচ উইকেট। তাই ৩৪ বছর বয়সী এই লেগস্পিনার তার সেরা সময় পার করে এসেছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

মুম্বাইয়ের কোচ মাহেলা জয়াবর্ধনের পরিকল্পনাটা পরিষ্কার। দলের ছয়জন সলিড ব্যাটারে আস্থা রাখতে চান তিনি। এরপর আর্চার, বুমরাহ, জানসেনরা সে রান ডিফেন্ড করবেন। যদিও এই পরিকল্পনায় বুমরাহ বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। সেক্ষেত্রে একজন বোলিং অলরাউন্ডার মিস করতে পারে তারা।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দল

ব্যাটার: ইশান কিষান, রোহতি শর্মা (অধিনায়ক), সূর্য কুমার যাদব, টিম ডেভিড, ত্রিসটান স্টাবস, বিষ্ণু বিনোদ।

অলরাউন্ডার: ডিওয়াল ব্রেভিস, ক্যামেরুন গ্রিন, শামস মুলানি, রামদ্বিপ সিং, তিলক ভার্মা।

বোলার: জফরা আর্চার, আরশাদ খান, জ্যাসন বেহেনডরফ, রাঘব গোয়াল, মার্কো জ্যানসেন, কুমার কার্তিকিয়া, আকাশ মাধোয়াল, হৃতিক শোকিন, অর্জুন টেন্ডুলকার, নেহাল ওয়াধেরা, জাসপ্রিত বুমরাহ, পিযুষ চাওলা, ঝাই রিচার্ডসন।