পুলিশকে আদালত: বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না

হত্যাকাণ্ডের ৪২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমাদানের আলোচিত ঘটনায় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেছেন, আদালতের কাছে বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না। একদম কারাগারে পাঠিয়ে দেব। সোমবার মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের মো. রুবেল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানার উদ্দেশ্যে বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত নিয়ে দাখিলকৃত রিটের ওপর সোমবার হাইকোর্টে শুনানি হয়

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে কৈতরা গ্রামের একটি হ্যাচারিতে খুন হন মো. রুবেল। এ ঘটনায় দুইদিনেরও কম সময়ে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা। রাত দেড়টায় মো. রুবেলের মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি, ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ, আসামি গ্রেপ্তার, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মানচিত্র তৈরি, সাক্ষ্য গ্রহণসহ তদন্ত শেষ হয় মাত্র ২২ ঘণ্টায়। এরপর ২০ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির, স্বীকারোক্তি আদায়সহ অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে শুনানির শুরুতে ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আপনার মতো পুলিশ অফিসার দরকার। আপনি মাত্র ৪২ ঘণ্টায় তদন্ত করলেন? কখন সাক্ষ্য নিলেন, কখন ঘুমালেন, খাওয়া দাওয়া করলেন তা আমাদের দেখান। কতটি মামলা তদন্ত করেছেন এবং সেগুলো কত সময়ে শেষ করেছেন, তার তালিকা আমাদের দেন।

এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, এটা আমার প্রথম তদন্ত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, চার্জশিট দ্রুত দিলেও সমস্যা, দেরি করে দিলেও সমস্যা।

এ সময় আদালত বলেন, তাহলে আমরা মক ট্রায়াল করতে পারি। কত দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেন সেটা দেখি। জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সে এখতিয়ার আদালতের আছে।

একপর্যায়ে আদালত দাখিলকৃত নথিতে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার মামলার একটি তদন্ত প্রতিবেদন রেফারেন্স হিসেবে সংযুক্ত দেখতে পান। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ রানাকে ভর্ৎসনা করে আদালত বলেন, কেন আপনি এটা দিলেন? আপনার কাছে তো রেফারেন্স চাওয়া হয়নি। বেশি স্মার্টনেস দেখাচ্ছেন। আদালতের সঙ্গে বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না। একেবারে কারাগারে পাঠিয়ে দেব।

গত ১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেনের বেঞ্চ গত ১৪ মার্চ ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত কেন অবৈধ হবে না তা জানতে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানা এসআই মো. মাসুদ রানাকে কেস ডকেটসহ ৩ এপ্রিল আদালতে হাজির হতে বলেন।