আড়াই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে হালাল রেস্টুরেন্ট বেড়েছে ৬৫ গুণ

গত ২৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে হালাল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৬৫ গুণ। সিকি শতাব্দী আগে দেশটিতে হালাল খাবার পরিবেশনকারী রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ছিল ২০০, যা এখন বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার। গোড়ার দিকে হালাল রেস্টুরেন্টগুলো মূলতঃ আরব, দক্ষিণ এশীয় ঘরোয়া খাবার পরিবেশন করত। বর্তমানে চায়নিজ, মেক্সিকান, কোরিয়ান সব ধরণের কুইজিন হালালভাবে প্রস্তুত ও পরিবেশন হচ্ছে। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের শেয়ারকৃত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

সব ধরণের খাবার আইটেম এখন হালালভাবে প্রস্তুত ও পরিবেশন হচ্ছে

১৯৯৮ সালে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে হালাল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ছিল সাকুল্যে ২২০টি। হালাল রেস্টুরেন্ট তখন ছিল কেবলমাত্র আরব, দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলমানদের আস্থার জায়গা। ঘরোয়া, প্রথাগত আরব ও এশীয় খাবারগুলোই পরিবেশন করত এসব রেস্টুরেন্ট। সেদিনের স্বল্প সংখ্যক হালাল রেস্টুরেন্টের অর্জিত জনপ্রিয়তা ও ইমেজে ভর করে দিনে দিনে পাল্টে গেছে মার্কিন মুলুকের বিরাট সংখ্যক মানুষের খাদ্যাভ্যাস।

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে দ্রুত বেড়েছে হালাল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা। বিষয়টি হালাল খাবারের প্রতি মুসলিমদের পাশাপাশি অমুসলিম জনগোষ্ঠীরও আস্থার সাক্ষ্য দিচ্ছে। সবার আস্থার জোরেই হালাল খাবার হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রে মূলধারার রেস্টুরেন্ট ব্যবসার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

হালাল রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি বেড়েছে আরব ও মুসলিম খাবার আইটেমের জনপ্রিয়তাও। আড়াই দশক বা তিন দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট ছাড়া অন্য কোথাও শর্মা, কাবাবের মতো আইটেম পাওয়া যেত না। এথন অমুসলিম মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টেও অহরহ মিলছে এসব খাবার।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে যে রেস্টুরেন্ট চেইনের, সেটি একটি হালাল রেস্টুরেন্ট। ডেভ’স হট চিকেনের আউটলেট সংখ্যা এক বছরে যত বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি আর কোনো রেস্টুরেন্ট চেইন।

ডেভ’স হট চিকেন শুধু নয়, ইসা হালাল, দি হালাল গাইজ- সবার প্রসার ঘটছে তরতরিয়ে। হালাল খাবারের জনপ্রিয়তার সুযোগ নিতে পিছিয়ে থাকছে না পুরোনো ফাস্ট ফুড চেইনগুলোও। কেএফসি, পপেয়িজ, টেক্সাস চিকেন অ্যান্ড বার্গারস, ক্রাউন ফ্রায়েড চিকেন, সনিকের মতো চেইনগুলোও হালাল ফুড নিয়ে বিভিন্ন শহরে নিজেদের স্বতন্ত্র আউটলেট খুলেছে।

রান্না বিষয়ক লেখিকা ইভন মাফেই বলেন, হালাল খাবার এখন কেবল সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর চাহিদা নয়। এটা হয়ে উঠেছে মূলধারার বিষয়। বিশ শতকের শেষার্ধে মেক্সিকান ফুডের জনপ্রিয়তা যেভাবে বেড়েছিল, গত কয়েক দশকে হালাল খাবারের জনপ্রিয়তাও সেভাবে বাড়ছে।

হালাল রেস্টুরেন্টের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে অর্থনৈতিক যুক্তিও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ মুসলিম। তবে শহরাঞ্চলে ক্ষেত্রবিশেষে মুসলিম জনগোষ্ঠীর আকার ৫-১০ শতাংশের মতো। এই ৫-১০ শতাংশ ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে চাইলে হালাল খাবার পরিবেশনের বিকল্প নেই। প্রথাগত খাবারের তুলনায় হালাল খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের ব্যয় ১ থেকে ২ শতাংশ বেশি। কিন্তু ৫-১০ শতাংশ ক্রেতার কাছে বিশেষ আবেদন নিয়ে হাজির হতে পারলে এবং তাদের আস্থা অর্জন করলে ওইটুকু বাড়তি খরচ করেও বরং লাভ হয়।