আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ৫০ কোটি ডলারের মামলা

কমপক্ষে ৫০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে নিজের সাবেক আইনজীবী ও বিশ্বস্ত অনুচর মাইকেল কোহেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক সপ্তাহ আগে কোহেনের জবানবন্দির ভিত্তিতে নিউইয়র্কের আদালত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এবার মিয়ামির আদালতে কোহেনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকলেন ট্রাম্প।

২০১৬ সালে ক্লিভল্যান্ডের একটি গির্জায় ডোনাল্ড ট্রাম্প, পেছনে মাইকেল কোহেন

মিয়ামির ফেডারেল কোর্টে দায়েরকৃত মামলায় ট্রাম্প কোহেনের বিরুদ্ধে আইনজীবী-মক্কেলের সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতা এবং বই ও পডকাস্টে তার সম্পর্কে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে মুনাফা অর্জনের অভিযোগ এনেছেন।

এদিকে মামলার একটি কপির ছবি টুইটারে পোস্ট করে কোহেন লিখেছেন, ট্রাম্পের ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির চেষ্টা সত্ত্বেও আমি কখনও ট্রাম্পকে তার নোংরা কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতে বাধ্য করার লড়াই থেকে বিরত হব না। মামলা মোকাবেলার তহবিল সংগ্রহের জন্য কোহেন তার টুইটে গোফান্ডমি’র একটি লিঙ্কও শেয়ার করেছেন।

কোহেনের আইনজীবী ল্যানি ড্যাভিস ট্রাম্পের দায়েরকৃত মামলাকে ‘ফালতু’ অভিহিত করে বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে ট্রাম্প প্রায়ই তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আবারও ট্রাম্প আইনি ব্যবস্থাকে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের পদ্ধতি হিসেবে কোহেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার ও অপব্যবহার করছেন।

ট্রাম্প এমন সময়ে এ মামলা করলেন যখন কোহেন তার বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের আদালতে সম্ভাব্য ফৌজদারি বিচারে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হতে চলেছেন। গত সপ্তাহে ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড জুরি ব্যবসায়িক রেকর্ড সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য প্রদানের ৩৪টি অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ গঠনের এটাই প্রথম ঘটনা।

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ট্রাম্প। নিজের বিরুদ্ধে আনীত ৩৪টি অভিযোগ তিনি আদালতে অস্বীকার করেছেন।

ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য আলভিন ব্র্যাগের নেতৃত্বাধীন কৌসুলীরা বলছেন, ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে মুখ বন্ধ রাখার জন্য পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছেন। কোহেনের মাধ্যমে ওই অর্থ দেওয়া হয়, যা ট্রাম্প গোপন করেছেন।

একসময় ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন কোহেন। পরবর্তীতে তিনি ট্রাম্পের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখনও তার আইনজীবী ছিলেন কোহেন।

২০১৭ সালের শেষদিকে ট্রাম্প-কোহেনের সম্পর্কে ভাঙন ধরে। এরপর থেকে কোহেন ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হন এবং নিজের সাবেক বসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তদন্তে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও আইনপ্রণেতাদের সহযোগিতা করতে থাকেন।

২০১৯ সালে মার্কিন কংগ্রেসে কমিটির এক শুনানিতে কোহেন বলেন, আমি খুব লজ্জিত কারণ আমি জানি ট্রাম্প কি। তিনি একজন বর্ণবাদী। তিনি ভণ্ড। তিনি একজন প্রতারক।

২০১৮ সালে কোহেন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার হস্তান্তরের মাধ্যমে নির্বাচনী আইন ভঙ্গের কথা স্বীকার করেন। নির্বাচনী আইন ভঙ্গ, ব্যক্তিগত কর পরিশোধে প্রতারণা, কংগ্রেসের শুনানিতে রাশিয়ায় ট্রাম্পের কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে শপথপূর্বক মিথ্যা বলা ও অন্যান্য অপরাধে তার তিন বছরের সাজা হয়।

জেল থেকে বেরিয়ে ট্রাম্পের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ও পডকাস্টে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন কোহেন। এ সময় তিনি ডিসলয়্যাল নামে একটি বই লেখেন, যেখানে ট্রাম্পকে বর্ণবাদী অভিহিত করা হয়। কোহেনের বিরুদ্ধে করা মামলায় এ বই ও পডকাস্টের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার অনুমতি ছাড়াই কোহেন অনেক গোপনীয় ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছেন।