ডা. জাফরুল্লাহ: বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের নেপথ্য কারিগর

স্থানীয় চাহিদার ৯৮% ওষুধ বাংলাদেশেই উৎপাদন হয়। দেশের ২১৩টি ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ওষুধ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। অথচ স্বাধীনতার পর প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। ওষুধ শিল্পে এই বিরাট পরিবর্তনের পেছনে বড় অবদান সদ্য প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। যিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

দেশের ওষুধ নীতি তৈরিতে বড় অবদান

বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্বল্পমূল্যে মানসম্মত ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়ন করা হয়। সে বছরের ১২ জুন অধ্যাদেশ আকারে জাতীয় ওষুধ নীতি জারি হয়।

এই নীতির কারণেই বাংলাদেশ এখন ওষুধ শিল্পে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেই সঙ্গে দেশে ওষুধের দাম চলে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালেই আছে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৪৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে।

দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জরুরি ওষুধ সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। একপর্যায়ে ওষুধ নীতি প্রণয়নের বিষয়টি তার মাথায় আসে। তার সেই চিন্তা বাস্তবে রূপ নেয় ১৯৮২ সালে। দেশে প্রথমবারের মতো একটি ওষুধ নীতি লাভ করে।

জাতীয় ওষুধ নীতির সবচেয়ে বড় উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল, বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে স্থানীয়ভাবে ওষুধ উৎপাদনের পথ তৈরি করে দেওয়া।

এ নীতির আওতায দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো আধুনিক প্রযুক্তি-সম্পন্ন বড় বড় কারখানা স্থাপন করেছে। বাংলাদেশে সুলভে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এ খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ২১৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়নের আগে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সে সময় বাংলাদেশে ১৭৮০টি ব্র্যান্ডের ওষুধ আমদানি করতে হতো। ওষুধগুলোও অনেক দামে কিনতে হতো। তবে ওষুধ নীতি প্রণয়নের পর আমদানি করা ওষুধের সংখ্যা ২২৫টিতে নেমে এসেছে।

হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, আমরা এখন বাংলাদেশের ৯৮% ওষুধের চাহিদা পূরণ করতে পারছি। এটা সম্ভব হয়েছে ওই জাতীয় ওষুধ নীতির কারণেই। কারণ এই নীতির কারণে কিছু বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি তাদের শেয়ার স্থানীয় শেয়ার হোল্ডারদের কাছে বিক্রি করে চলে যায়। আবার কিছু কোম্পানি দেশীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

ডা. জাফরুল্লাহর ওষুধ নীতিটি সে সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও সমাদৃত হয়। সবশেষ ২০০৫ ও ২০১৬ সালে নীতিটি নবায়ন করা হয়েছে।