সারস বন্ধুর মুক্তি চান কৃষক মোহাম্মদ আরিফ

একটি বিশাল আকৃতির সারস পাখির সঙ্গে ভারতীয় কৃষক মোহাম্মদ আরিফের বন্ধুত্বের খবর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে অনেকেই জানেন। আহত সারসটিকে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বন্যপ্রাণী কর্তৃপক্ষ পাখিটিকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যায়। এখন প্রিয় বন্ধুকে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। খবর এএফপি।

সারস পাখির সঙ্গে ভারতীয় কৃষক মোহাম্মদ আরিফের বন্ধুত্ব

১১ এপ্রিল, মঙ্গলবার পাখিটিকে দেখতে চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন আরিফ। দুই বন্ধুর আবেগপূর্ণ পুনর্মিলনের ভিডিও অনলাইনে শেয়ার করা হয়। এতে দেখা যাচ্ছে, পাখিটি উত্তেজিতভাবে তার ডানা ঝাপটাচ্ছে এবং লাফ দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে আরিফ বলেছেন, ‘চিড়িয়াখানায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই সে আমার কণ্ঠস্বর চিনতে পেরেছে। আমাকে দেখে খুশিতে ডানা ঝাপ্টাচ্ছিল। কিন্তু আমি চলে আসার সময় তাকে বেশ ব্যথিত মনে হয়েছিল। সে হয়তো ভেবেছিল আমি তাকে জেল থেকে মুক্তি দেব।'

৩০ বছর বয়সী ভারতীয় এই কৃষক জানিয়েছেন, পাখিটিকে তিনি বন্দি করে রাখেননি। এটি দিনের বেলায় নিজের পরিবারের সঙ্গেই থাকত। কেবল সন্ধ্যায় হলেই ফিরে আসত। যখন ক্ষুধার্ত হত, তখন বিকেলে তাদের বাসার দরজায় এসে অপেক্ষা করত।

আরিফ উল্লেখ করেন, সারসটিকে সুস্থ করার পর তিনি এটিকে ছেড়ে দেন। কিন্তু সে আমেথি শহরে তার বাড়ির কাছেই থেকে যায়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে বন্ধুর মত সম্পর্ক তৈরি হয়। এমনকি তিনি যখন বাইক চালিয়ে কোথাও যেতেন, পাখিটিও তার সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যেত।

চিড়িয়াখানায় বন্দি সারস পাখিটি

সারস পাখির সঙ্গে আরিফের অভিনব এই বন্ধুত্বের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার পর তা ভাইরাল হয়ে যায়। তিনি পাখিটির সঙ্গে তার বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও ইনস্টাগ্রামেও শেয়ার করেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই ৩ লাখ ফলোয়ার পেয়ে যান তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ভিডিওগুলো উত্তর প্রদেশের বন্যপ্রাণী কর্তৃপক্ষের নজরেও পড়ে। এরপর গত মাসে সারস পাখিটিকে কানপুরের একটি চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি ছোট খাঁচায় তাকে রাখা হয়েছে। আরিফ তার পাখি বন্ধুটিকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে ভারতীয় জনগণও আরিফের সঙ্গে একমত। তারাও পাখিটির মুক্তি চায়। এটির মুক্তির দাবিতে অনলাইনের একটি পিটিশনে প্রায় ৪ হাজার স্বাক্ষর পড়েছে। পিটিশনে বলা হয়েছে, ‘সারসটি কোনো অপরাধ করেনি। মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা কি অপরাধ?’

মোহাম্মদ আরিফের চাওয়া তার বন্ধুকে হয় বনে বা পাখির অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেওয়া হোক। তিনি বলেছেন, ‘এটি আগে কখনও খাঁচায় বাস করেনি, এটি সবসময় মুক্ত ছিল। যে মুহূর্তে তারা পাখিটিকে ছেড়ে দেবে, এটি আমার কাছে ফিরে আসবে।'