হাবিব গ্রুপের কাছে ৩০ প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৪ হাজার কোটি টাকা

৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে ৪ হাজার কোটি খেলাপি ঋণের বোঝা চাপিয়ে ডুবতে বসেছে হাবিব গ্রুপ। চট্টগ্রামভিত্তিক এ কনগ্লোমারেটের সব পরিচালক এরইমধ্যে দেশ ছেড়েছেন। এ অবস্থায় পাওনা আদায়ে দিশেহারা ব্যাংকাররা দ্বারস্থ হয়েছেন আদালতের। ইংরেজি দৈনিক দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিগত দশকে এয়ারলাইন্স ব্যবসায় নামে হাবিব গ্রুপ

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, পারিবারিক মালিকানাধীন ৭৫ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানটি ভুল ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের জেরে ডুবতে বসেছে। দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে আসা হাবিব গ্রুপকে গ্রাহক হিসেবে পেতে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। চলতি শতকের শুরু থেকে তাই ব্যাংকগুলো উদারভাবে ঋণ দিয়েছে হাবিব গ্রুপকে।

গোড়ার দিকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি ও দায় পরিশোধ করলেও ২০১৪-১৫ সাল থেকে হাবিব গ্রুপের ঋণ পরিশোধ অনিয়মিত হয়ে পড়ে। সে সময় এয়ারলাইন্স, বিদ্যুতকেন্দ্রের ব্যবসায় জড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। ভুল সিদ্ধান্তের জেরে এখন মৃতপ্রায় অবস্থা হাবিব গ্রুপের। বন্দরনগরীর লাভ লেনে হাবিব গ্রুপের করপোরেট হেডকোয়ার্টার এখন প্রায় জনশূন্য। এই গ্রুপের ৩১টি কোম্পানির বেশিরভাগেরই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বাছবিচারহীন ঋণ দেওয়ার পরিণামে এখন হাবিব গ্রুপের মতোই সংকটে পড়েছে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে, হাবিব গ্রুপের পাঁচ পরিচালক ইয়াকুব আলী, ইয়াসিন আলী, মাশরুফ হাবিব, সালমান হাবিব ও তানভীর হাবিবের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। যদিও তার আগেই আগস্টে তারা দেশ ছেড়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, হাবিব গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেনা রয়েছে হাবিব স্টিলসের। ১৪টি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে হাবিব স্টিলসের দেনার পরিমাণ এখন ৭৯৭ কোটি টাকা। আরেক কোম্পানি রিজেন্ট এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের কাছে আট ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৪৪৪ কোটি টাকা।

একইভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডায়মন্ড সিমেন্টের ৪০৯ কোটি টাকা, লিগ্যাসি ফ্যাশনের ৩৩৪ কোটি টাকা, রিজেন্ট স্পিনিং মিলসের ৩০২ কোটি টাকা, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলসের ২৩২ কোটি টাকা, হেলা ক্লদিংয়ের ২১০ কোটি টাকা, এএনজেড প্রপার্টিজের ১৫৮ কোটি টাকা, আনোয়ারা ফ্যাশনের ১৫৫ কোটি টাকা, রিজেন্ট উইভিংয়ের ১৫১ কোটি টাকা, সাইমেস সুপেরিয়রের ১৪৫ কোটি টাকা, রিজেন্ট ফেব্রিকের ১৩৫ কোটি টাকা ও এইচজি এভিয়েশনের ১১৩ কোটি টাকা বকেয়া ঋণ রয়েছে।

এছাড়া চিটাগাং স্টিল এন্টারপ্রাইজের ৯১ কোটি টাকা, এমটিএস রি-রোলিং মিলসের ৬৬ কোটি টাকা, আনোয়ারা পেপার মিলসের ৩৪ কোটি টাকা, রিজেন্ট পাওয়ারের ২৯ কোটি টাকা, ভ্যালায়েন্ট ফ্যাশনের ১৪ কোটি টাকা, ওশেন মেরিটের ১৪ কোটি টাকা, আলী ফ্যাশনের ১৪ কোটি টাকা, ফরচুন নেভিগেশনের ১২ কোটি টাকা ও সাউদার্ন মেডিকেল কলেজের আড়াই কোটি টাকা দেনা রয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে।

এর বাইরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ৩০০ কোটি টাকা আটকে আছে হাবিব গ্রুপে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনাদায়ী পাওনা আছে ২০০ কোটি টাকা। নাহিদ কটন মিলস পাবে ১০ কোটি টাকা। বিমানের ২০ পাইলটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা হাবিব গ্রুপের কাছে পাবেন আরও বেশকিছু টাকা।

হাবিব গ্রুপের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে এরইমধ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, আইডিএলসি ফিন্যান্স, ব্যাংক এশিয়া ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। এছাড়া চেক ডিজঅনারিংয়ের ১৫টি মামলা করেছে ওয়ান ব্যাংক।