২,০০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ

২২ বছরে ২০০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের পরিচালকরা। টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার (টিটি) ও ওভার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ পাচার করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে নিরীক্ষা ও তদন্তে এ সব অনিয়মের কথা বেরিয়ে এসেছে।

রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড

রিং শাইন টেক্সটাইলসের লেনদেন খতিয়ে দেখতে ২০২১ সালে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় বিএসইসি। একই বছর অক্টোবরে কোম্পানিটির বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তদন্ত কমিটি ও নিরীক্ষকের প্রতিবেদন থেকে কোম্পানিটির অনিয়ম ও অর্থপাচারের তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, রিং শাইন টেক্সটাইলসের সাবেক এমডি, ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক সুং ওয়ে মিন অর্থপাচারে বড় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ২২ বছরে কোম্পানিটির করপোরেট অ্যাকাউন্ট থেকে সাবেক এমডি, স্পন্সর ডিরেক্টর ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিদেশি অ্যাকাউন্টে টিটির মাধ্যমে ১২ কোটি ৪০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা প্রায়) স্থানান্তর করা হয়েছে।

বিএসইসির উদ্যোগে নিরীক্ষা ও তদন্তে রিং শাইনে অনিয়মের বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে

এছাড়া, ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিভিন্ন সম্পদ, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল কেনার কথা বলে ওভার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আরও ৮৪৫ কোটি টাকা। কোম্পানির সাবেক পরিচালক আবদুল কাদের ফারুক সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংকে রিং শাইন টেক্সটাইলসের দুটি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতেন। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে দুই দফায় তিনি মোট ৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা পাচার করেছেন। এর মধ্যে প্রথম দফায় ১৯ কোটি ২০ লাখ ও পরে ২০ কোটি টাকা পাচার করা হয়।

এক সময় সম্ভাবনাময় শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রিং শাইন টেক্সটাইলস এখন ঋণের ভারে বিপর্যস্ত। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির স্পন্সর পরিচালকদের সবাই ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের নাগিরক। এদের মধ্যে সাবেক এমডি সুং ওয়ে মিনের বাংলাদেশ ছাড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিএসইসি।

অর্থপাচারের ঘটনায় মন্তব্য জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএসইসির এক সময়ের চেয়ারম্যান ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো, নিরীক্ষক ও ইস্যু ম্যানেজারদের কেউ এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। অনিয়মের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে ও তাদের সম্পদ জব্দ করতে হবে।

বিএসইসির প্রতিবেদনটি সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান বরাবর পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সাবেক এমডি সুং ওয়ে মিন যাতে বাংলাদেশ ছাড়তে না পারেন সে বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।