যে কৌশলে মার্কিন স্মার্ট বোমাগুলোও ব্যর্থ করে দিচ্ছে রাশিয়া

রাশিয়াকে পর্যদুস্ত করতে ইউক্রেনকে বিশেষ ধরনের বোমা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। জিপিআরএস সিস্টেমের এসব স্মার্ট বোমা লক্ষ্যবস্তুতে ঠিকমতো আঘাত হানতে সক্ষম। কিন্তু তাদের সে কৌশল ক্রেমলিনের কৌশলের কাছে মার খেয়ে যাচ্ছে। জ্যামার ব্যবহার করে এসব বোমাকে অকার্যকর করে দিচ্ছে মস্কো। খবর পপুলার মেকানিকস।

জেড্যাম সংযুক্ত বোমা

গতানুগতিক যেসব বোমা বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয়, সেগুলো সাধারণত অভিকর্ষের টানেই মাটিতে পড়ে। ফলে অনেক সময়ই এগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়। এক্ষেত্রে জয়েন্ট ডিরেক্ট অ্যাটাক মিউনিশন (জেড্যাম) নামের প্রযুক্তি কিট দিয়ে সেটিকে স্মার্ট বোমায় রূপান্তর করা হয়।

কিটের জিপিএস রিসিভার, কম্পিউটার চিপ, ও আকাশে বোমার গতিপথ ঠিক রাখার ডানার সাহায্য এসব বোমা গাইডেড বোমায় পরিণত হয়। সাধারণত ৫০০ পাউন্ডের এমকে-৮২, এক হাজার পাউন্ডের এমকে-৮৩ এবং দুই হাজার পাউন্ডের এমকে-৮৪ মানের বোমাগুলোতে জেড্যাম সংযুক্ত করা হয়।

রাশিয়ার ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ার ইউনিট

গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে স্যাটেলাইট-গাইডেড জেড্যাম পাঠানোর ঘোষণা দেয়। উদ্দেশ্য ছিল, যেন প্রিসিশন-গাইডেড বোমার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। কিন্তু চার মাস পর এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, তাদের জিপিএস বোমাগুলো রাশিয়ার জ্যামিং ব্যবস্থার কারণে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া কিছু মার্কিন নথিতে দেখা গেছে, জেড্যাম প্রযুক্তি সংযুক্ত বোমাগুলো লক্ষ্যবস্তুতে ঠিকমতো আঘাত হানতে পারছে না। এ জন্য তারা রাশিয়ার ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ারকে বিশেষ করে রেডিও জ্যামিং ব্যবস্থাকে দায়ী করেছে।

রাশিয়া বিষয়টি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। ফলে এ হুমকি মোকাবেলায় জিপিএস জ্যামিং প্রযুক্তি তৈরি করে। রুশ সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচটি ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ার ব্রিগেড যুদ্ধক্ষেত্রে জ্যামিং অপারেশন পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছে।

এ ব্যবস্থায় শত্রুপক্ষের কোনো বিমান রাশিয়ান ফ্রন্ট লাইনের কাছাকাছি পৌঁছলে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার সেটিকে শনাক্ত করে কাছাকাছি অবস্থিত ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ার ইউনিটের কাছে বার্তা পাঠায়। তখন ইলেকট্রনিক-ওয়ারফেয়ার দলটি তাদের শক্তিশালী ক্রাসুখা-৪, পোল ২১-ই, অথবা আর-৩৩০জেডএইচ জিটেল জ্যামারগুলো চালু করে দেয়। এসব জ্যামার স্যাটেলাইটের রেডিও সিগন্যালকে প্রায় পুরোপুরি অকার্যকর করে দেয়। ফলে জিপিএস সিগন্যাল না পেয়ে জেড্যাম সাধারণ বোমায় পরিণত হয় এবং নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তু থেকে সরে যায়।

শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে রাশিয়া বছরের পর বছর ধরে প্রচুর বিনিয়োগ করে আসছে। এখন তারই সুফল পাচ্ছে দেশটি।