একটি আমের দাম যখন ২৫ হাজার টাকা!

জাপানের তুষারময় একটি এলাকা তোকাচি অঞ্চল। সেখানকার তাপমাত্রা যখন আট ডিগ্রি, সেই মুহূর্তেই একটি খামারে ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা ঠিক করা হয়েছে আম চাষের জন্য। সেখানেই নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম উৎপাদন করেন হিরোইয়ুকি নাকাগাওয়া। সেখানকার প্রতিটি আমের দাম বর্তমানে ২৩০ ডলার বা প্রায় ২৫ হাজার টাকা। খবর ব্লুমবার্গ।

সেই বিখ্যাত আম

জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের অটোফুক শহরে নাকাগাওয়ার ওই গ্রিনহাউরজ আম বাগানটির অবস্থান। সেখান থেকে তিনি পরিপক্ক ও রসালো আমগুলো সংগ্রহ করে ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত করছিলেন। ২০১১ সালে তিনি এই আম উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। শুরুতে কেউ তার এই কাজকে সমর্থন দেয়নি। প্রথমে তেমন উল্লেখযোগ্য ফল না পেলেও পিছু হটেননি নাকাগাওয়া। কয়েক বছর পর তিনি ‘হাকুগিন নো তাইয়ো’ নামে তার আমের ট্রেডমার্ক করিয়ে নেন। ইংরেজিতে এই নামের অর্থ ‘সান ইন দ্য স্নো'।

হোক্কাইডো দ্বীপে দুটি বিপরীতমুখী জিনিস পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে তুষার ও প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত উষ্ণ পানি। নাকাগাওয়া এই দুটি জিনিসকেই কাজে লাগিয়েছেন। শীতকালে বরফ সংগ্রহ করে জমিয়ে রাখেন এবং গরমকালে গ্রিনহাউজকে ঠান্ডা রাখতে সেগুলো ব্যবহার করেন। এ কারণে আমগাছে মুকুল দেরিতে আসে। আবার প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত উষ্ণ পানি জমিয়ে রেখে সেগুলো ব্যবহার করেন তার গ্রিনহাউজকে উষ্ণ রাখতে।

আম সংগ্রহ করছেন এক নারী

তার এই কৌশলের কারণে তার বাগানের আমগুলো পাকতে শুরু করে শীতকালে। আবার এই প্রক্রিয়ার ফলে শীতকালে আমগুলো পাকতে শুরু করে। শীতে পোকামাকড়ের উৎপাত কম থাকায় কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। আবার স্থানীয় আবহাওয়ার কারণে খুব বেশি কেমিক্যালের দরকার হয় না। এভাবে নিয়ন্ত্রিত পন্থায় মৌসুমে তার বাগানে প্রায় পাঁচ হাজার আম উৎপাদন হয়।

নাকাগাওয়া দাবি করেন, এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত আমগুলোর স্বাদ স্বাভাবিকের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায়। আমগুলোর গঠনবিন্যাস একেবারে মাখনের মতো। এখন জাপানের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তার এই আম বিক্রি হয়। ২০১৪ সালে তার একটি আম ৪০০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। এখন গড়ে তার প্রতিটি আমের দাম ২৩০ ডলার বা ২৫ হাজার টাকা। তবে এ মূল্যেও যে খুব সহজেই আমটি পাওয়া যাচ্ছে তা নয়, বরং অধিকাংশ সময়েই আমের ডিসপ্লেতে লেখা ওঠে থাকে, ‘সোল্ড আউট’।

এদিকে কীটনাশক ব্যবহার না করায় লুপিসিয়া নামক একটি চা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাঙ্গো টি বানাতে ওই বাগানের আমগাছের পাতা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন নাকাগাওয়া। তিনি এখন এই পদ্ধতিতে পিচ ফল উৎপাদনের কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে।