পাঁচ মামলায় ইমরান খানের জামিন, জরুরি অবস্থার প্রস্তাব!

পাকিস্তানের ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইমরান খানকে পাঁচটি মামলায় জামিন দিয়েছে। আগামী ১৭ মে পর্যন্ত কোনো মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে আদালত আদেশ দিয়েছে। এদিকে পাকিস্তানের মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে।

ইসলামাবাদ হাইকোর্টে প্রবেশের মুহূর্তে ইমরান খান

বিচারপতি মিয়ানগুল হাসান আওরঙ্গজেব ও বিচারপতি সামান রাফাত ইমতিয়াজকে নিয়ে গঠিত ইসলামাবাদ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পাঁচ মামলায় ইমরান খানের দুই সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করেছে। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের একদিনের মাথায় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এ রায় দিলো।

ইমরান খানের আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলাকে একত্র করতে এবং কোথায় কোথায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সে সংক্রান্ত তথ্য দিতে সরকারের প্রতি আদালতের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে বিকেলে সবকটি মামলার শুনানি শুরু করেন।

এর আগে সকালে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলার শুনানি শুরু হবার কথা থাকলেও তা দুই ঘণ্টা পিছিয়ে যায়। নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি অভিযানের কারণে শুনানি বিলম্বিত হয় বলে ডন জানিয়েছে।

দুপুরে মামলার শুনানি শুরু হবার কিছুক্ষণ পর আযান হলে আদালত জুমার বিরতি ঘোষণা করে। পরে ইসলামাবাদ সময় দুপুর ২:৩০ মিনিটে আবার আদালত বসে।

আদালতে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলার শুনানি চলাকালে ইমরান খানের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ইসলামাবাদে হাজির হয় লাহোর পুলিশের একটি দল। তারা ইসলামাবাদ পুলিশের কাছে পরোয়ানা হস্তান্তন করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সকালে ইমরান খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পিডিএম জোটের পক্ষ থেকে লাহোরের একটি থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইমরান খান বলেছেন, তারা আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারে বলে আমি মনে করছি। আগেরবার গ্রেপ্তারের পর আমাকে ২৪ ঘণ্টা ধরে বাইরের কোনো খবর জানানো হয়নি। আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আমি বাইরের পরিস্থিতি জানতে পারি। অতীতে আমি সংঘাতের আশঙ্কা দেখলে নিজের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাতিল বা স্থগিত করেছি। আমার জনগণ, আমার সেনাবাহিনী, আমার দেশে যা হয়েছে, সব অনাকাঙ্খিত।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলার শুনানিকে ঘিরে ইসলামাবাদজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। নগরী থেকে বেরোনোর পথে শ্রীনগর হাইওয়েতে ইমরান খানের সমর্থকদের জমায়েতে টিয়ারগ্যাস ছুঁড়েছে পুলিশ।

গতকাল রাতে বিশেষ অভিযানে ইমরানের মন্ত্রিসভার সদস্য ও পিটিআইর জ্যেষ্ঠ নেতা শিরিন মাজারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পিটিআইর উল্লেখযোগ্য সব নেতার বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। বেশ কয়েকজন নেতার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সকালে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক করেন। এ সময় উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তাদের সভাকক্ষ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং পরে ইসলামাবাদ সময় বিকেল ৪টায় আবারও মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরু হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মন্ত্রিসভার তরফ থেকে শাহবাজকে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দেওয়া হয়ে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাওয়া যায়নি।

রাজনৈতিক এ ডামাডোলের মধ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতার আসল খেলুড়ে বলে পরিচিত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য কোনো বক্তব্য বা উপস্থিতি এখনও নজরে আসছে না। তবে পেশোয়ার, রাওয়ালপিন্ডি ও পাঞ্জাবে সেনাবাহিনীর ফ্ল্যাগমার্চ অব্যাহত রয়েছে।

পিটিআই সূত্রগুলো জানিয়েছে, আদালত থেকে বেরোনোর পর ইমরান খান দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোনো সময় এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।