আরব লিগ: শুধু ইউক্রেন নয়, নিরাপত্তা পরিষদকে আরবসহ বৈশ্বিক সংকটের দিকে নজর দিতে হবে

বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে কেবল ইউক্রেনকে অগ্রাধিকার না দিয়ে ইয়েমেন, সিরিয়া, সোমালিয়া, সুদানসহ অন্যান্য অঞ্চলের বৈশ্বিক সংঘাত ও এর কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকটের দিকে নজর দিতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার আরব লিগের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়। খবর আরব নিউজ।

আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইত

আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইত নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্যদের লক্ষ্য করে বলেন, বিশ্ব এখনই খুবই জটিল একটি সময় পার করছে। এ সময় বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা গেছে। একই সঙ্গে বিশ্ব বড় বড় শক্তিগুলোর মেরুকরণও দেখেছে। এটি বিশ্বকে একটি পারমাণবিক সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

আবুল ঘেইত বলেন, এর ফলে বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা এবং গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তারের মতো আধুনিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

সুদানে দুই মাস ধরে চলছে সংঘাত

নিরাপত্তা পরিষদের চলতি জুন মাসের সভাপতি সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃক আয়োজিত একটি কাউন্সিল সভায় আবুল ঘেইত এসব মন্তব্য করেন। আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং মানবিক চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘ ও আরব লিগের যৌথ কার্যক্রম বাড়ানোর উপায় নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।

কাউন্সিল সভায় লিবিয়া, সিরিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের চলমান সংঘাতের বিষয়ে বেশ গুরুত্বারোপ করে বলা হয়, এসব দেশে সংঘাতের কারণে লাখ লাখ মানুষ অকল্পনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এছাড়া লেবানন ও সোমালিয়ার মতো দেশগুলো গভীর অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ বেকারত্ব ও তীব্র মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হচ্ছে। এতে দেশগুলোতে তীব্র মানবিক সংকট তৈরি হচ্ছে।

সভায় আরও বলা হয়, এই বছরের শুরুর দিকে সিরিয়া ও তুরস্কে আঘাত হানা ভূমিকম্পগুলো এই অঞ্চলে দুর্ভোগ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ভূমিকম্পে বাড়িঘর ও অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং লাখ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

আবুল ঘেইত বলেন, সুদানেরা রাজধানী খার্তুম গত দুই মাস ধরে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় সেখানে নজিরবিহীন মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সাথে তার সমসাময়িক ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছে, যেখানে মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি, লুটপাট এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, আরব লিগ সুদানসহ অন্যান্য দেশের এসব সংকট নিরসনে আফ্রিকান ইউনিয়নসহ আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে এখানকার সংঘাত পুরোপুরি বন্ধ হয় এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে।

ফিলিস্তিন সম্পর্কে আবুল ঘেইত তার বক্তৃতায় বলেন, ফিলিস্তিনিরা ইসরাইল সরকারের ক্রমাগত দখলদারিত্ব নিপীড়ন ও সহিংতার শিকার হচ্ছে। ইসরায়েল সরকার প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে তুলছে। দ্রুত এ সমস্যা পুরোপুরি দূর করতে তিনি কাউন্সিল সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।

আরব লিগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তনকে তার দশকব্যাপী সঙ্কট মোকাবেলার একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে সংস্থার মহাসচিব বলেন, এর দ্বারা সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ সমস্যা দূর করা সহজতর হবে। এ সময় তিনি ইয়েমেনের যুদ্ধবিরতি, সৌদি-ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ও উল্লেখ করেন।

কাউন্সিল সভায় রাজনৈতিক ও শান্তি বিনির্মাণ বিষয়ক জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল রোজমেরি ডিকার্লো বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব পরিস্থিতি এত জটিল হয়ে গেছে যে, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিত অব্যাহত রাখা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। তবে তিনি এ-ও বলেন, এমন প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে দৃঢ় হয়েছে।

ডিকার্লো বলেন, সুদানে সংঘাতের অবসান ঘটাতে আরব দেশগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি আরব লিগ, আফ্রিকান ইউনিয়নসহ অন্যান্য অংশীদারদের শান্তি প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তবে তিনি বলেন, শুধু যুদ্ধবিরতি এই সংঘাত থামাতে যথেষ্ট হবে না। বরং আমাদের শত্রুতা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে এবং রাজনৈতিক ধারার পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে।

ডিকার্লো ইসরায়েলি-ফিলিস্তিন বিরোধ সমাধনের জন্য একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার জন্য আবুল ঘেইটের আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেন এবং লিবিয়ার সঙ্কটের সমাধান চেষ্টার জন্য আরব লিগের প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন।