বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর চার শিশুকে জীবিত উদ্ধার

কলম্বিয়ার আমাজন জঙ্গলে একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পর ওই বিমানের যাত্রী চার শিশুকে গতকাল জীবিত পাওয়া গেছে। প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এই ঘটনাকে পুরো দেশের জন্য আনন্দ সংবাদ বলে ঘোষণা করেছেন। গত ১ মে সংঘটিত ওই বিমান দুর্ঘটনায় এই শিশুদের মাসহ তিনজন নিহত হয়েছিলেন। খবর বিবিসি, আল জাজিরা ও ওয়াশিংটন পোস্ট।

শিশুদের সাথে উদ্ধারকারী দল

গুস্তাভো পেত্রো দিনটিকে একটি জাদুকরী দিন অভিহিত করে বলেছেন, তারা একা ছিল। তারা নিজেরাই সামগ্রিকভাবে বেঁচে থাকার উদাহরণ অর্জন করেছে, যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।

গত ১ মে একটি সেসনা ২০৬ বিমানে করে এক নারী তার ১৩, ৯, ৪ এবং ১ বছর বয়সী চার শিশুকে নিয়ে আমাজোনাস প্রদেশের আরাকুয়ারা থেকে সান জোসে দেল গুয়াভিয়ারে যাচ্ছিলেন। ওই বিমানে একজন পাইলট এবং একজন সহ-পাইলটও ছিলেন।

দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত বিমান

ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে বিমানটি মে ডে সতর্কতা জারি করে। এক পর্যায়ে বিমানটি ট্র্যাকিং রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। উদ্ধারকারীরা পরে জঙ্গলের মধ্যে বিমানটিকে বিধ্বস্ত অবস্থায় খুঁজে পান। সেখানে তারা তিনটি মৃতদেহ দেখতে পান। উদ্ধারকারীরা তাদের শিশুদের মা, পাইলট ও সহ-পাইলট হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু সেখানে তারা চার শিশুর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হলো দুই সপ্তাহ পর উদ্ধারকারীরা একটি শিশুর পানীয় বোতল, এক জোড়া কাঁচি, একটি চুলের ব্যান্ড এবং একটি অস্থায়ী আশ্রয়সহ শিশুদের রেখে যাওয়া কয়েকটি জিনিস উদ্ধার করে। শিশুদের পায়ের ছাপও তারা খুঁজে পায়। ধারণা করা হয়, বিধ্বস্ত বিমানে থাকা শিশুরা বেঁচে আছে।

পরে উদ্ধারকারী সেনাবাহিনীর সাথে স্থানীয় আধিবাসীরাও শিশুদের উদ্ধার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে সময় হেলিকপ্টারে করে ওই শিশুদের দাদীর রেকর্ড করা একটি বার্তা সম্প্রচার করা হয়, যাতে শিশুদের চলাচল না করে এক জায়গায় অবস্থান করতে বলা হয়েছিল।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভান ভেলাসকুয়েজ গোমেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে জানান, ‘অপারেশন মিরাকল’ নামের ওই উদ্ধার অভিযানে শতাধিক সামরিক কর্মী এবং আদিবাসী স্বেচ্ছাসেবক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বাচ্চাদের অনুসন্ধান চালিয়েছে। কলম্বিয়ার সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর বিমান ও হেলিকপ্টার উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়।

অবশেষে শুক্রবার কলম্বিয়ার ক্যাকুয়েটা এবং গুয়াভিয়ার প্রদেশের মধ্যে সীমান্তের কাছে ওই শিশুদের সন্ধান পাওয়া যায়। তাদের এখন চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ওই শিশুরা হুইটোতো সম্প্রদায়ের সদস্য। এই জঙ্গলে বিপদের সময় কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় সে সম্পর্কে তাদের কিছুটা ধারণা ছিল। সেটিই তারা কাজে লাগিয়েছে।

এদিকে উদ্ধার পাওয়া শিশুদের দাদা নার্সিজো মুকুটুই সাংবাদিকদের বলেছেন, শিশুদের উদ্ধারের খবরে তিনি খুবই আনন্দিত।